ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র চার দিন। রাজধানীতে এখনও জমেনি পশুর হাটগুলো। বুধবারও বলার মতো পশু বিক্রি হয়নি কোনো হাটেই। পর্যাপ্ত পশু থাকলেও হাটে ক্রেতার চেয়ে কিশোর-তরুণ দর্শনার্থীদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
কর্মব্যস্ত দিনে পরিবারের অভিভাবক ব্যস্ত, তাই হাট ঘুরে নিজেদের কোরবানির পশু পছন্দ করে রাখার দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
রাজধানীর কমলাপুর, শাহজাহানপুর, আফতাবনগরসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কমলাপুর হাটে সারা দিনে বিক্রি হয়েছে ২০-২৫টি পশু। দিনভর অলস সময় পার করেছেন হাসিলঘরের হিসাবরক্ষকরা।
হিসাবরক্ষক কাঞ্চন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও পশু বিক্রি শুরু হয়নি। ঢাকায় তো পশু রাখার সমস্যা, এ কারণে দেখা যায় ঈদের দুই দিন আগে থেকে বিক্রি শুরু হয়। আমরা আশা করছি বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্রি শুরু হবে।’
কাঞ্চনের সঙ্গে কথা বলে কমলাপুর হাটে ঢুকতেই দেখা গেল হাটভর্তি পশুর সমাহার। মাঝারি থেকে বড় গরুর সংখ্যাই বেশি। বেপারিরা ব্যস্ত তার নিজের পশুটির যত্নআত্তি নিয়েই।
তবে হাটজুড়ে দেখা মেলে উৎসুক তরুণদের ভিড়। দল বেঁধে তারা এসেছেন হাটে পশুর দাম যাচাই করতে। আকর্ষণীয় ও বড় আকৃতির পশুগুলোকে ঘিরেই তাদের যত আকর্ষণ।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির পশু কেনা হবে দু-এক দিন পর। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি যাচাই ও আগাম পশু পছন্দ করতে আশপাশ থেকে হাটে গেছেন তরুণরা।
আবিদ খান নামে এক তরুণ বলেন, ‘বাবার আগামীকাল পর্যন্ত অফিস খোলা, তাই পরশু আমরা গরু কিনব। আগে এসে একটু দাম-দর দেখছি, কোনো গরু যদি পছন্দ হয় তাহলে মার্ক করে যাব।’
ইমন নামে এক তরুণ দাঁড়িয়ে ছিলেন কমলাপুর হাটের সবচেয়ে বড় গরুটির সামনে। কুষ্টিয়ার রোকনুজ্জামান খোকনের পালিত এই ব্রামহা জাতের ক্রস গরুটির ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি। ইমন সময় নিয়ে খোকনের কাছ থেকে গরুটির খুঁটিনাটি যাচাই করছেন। ইমনের আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা শাহজাহানপুরে সব সময় চেষ্ট করি সবচেয়ে বড় গরুটা কোরবানি দিতে। বলতে পারেন এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমি আশপাশের হাটগুলো ঘুরে সবচেয়ে বড় গরুটা খুঁজছি। মনে হচ্ছে এটাই সবচেয়ে বড়। বাসায় গিয়ে সবাইকে ছবি দেখাব। এরপর দাদা-চাচা-আব্বু আর আমাদের কাজিনরা মিলে কিনে নিয়ে যাব।’
রোকনুজ্জামান খোকন বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে এই একটি গরুই লালন-পালন করেছি। এই প্রথম আমি গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছি। এখানে আনার পর দেখি কমলাপুর হাটে আমার গরুটাই সবচেয়ে বড়, মানুষের আগ্রহও অনেক গরুটিকে ঘিরে। আমি এর দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা। এখন দেখা যাক কত দাম ওঠে। আমি যেহেতু একটা গরুই নিয়ে এসেছি তাই আশা করছি ন্যায্য দামেই বিক্রি হবে।’
খোকনের মতো অধিকাংশ বেপারিই নিজেদের পশু নিয়ে ঢাকায় এসেছেন একটু বাড়তি আয়ের আশায়। তারাও জানেন ঢাকায় হাট জমে ঈদের দুই-এক দিন আগেই। তাই বুধবার দিনব্যাপী ক্রেতার দেখা না পেলেও হতাশ নন তারা।
নজরুল নামে এক বেপারি বলেন, ‘ঢাকার মানুষ ব্যস্ত। তার ওপর গরু রাখার জায়গা আর যত্ন করার সময় কই? আজকে দিন খারাপ গেছে সমস্যা নাই, বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিক্রি শুরু হলে সব পুষিয়ে যাবে।’
দাম ও চাহিদা কেমন
রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে ঘুরে এবারে দাম নিয়ে ত্রেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও পছন্দের তালিকায় মাঝারি আকৃতির পশুর চাহিদাই বেশি। ক্রেতাদের পছন্দ মাথায় রেখেই এবার হাটগুলোতে মাঝারি আকারের পশুর সরবরাহ বেশ। তবে দাম নিয়ে অনেকের মাঝে ক্রেতা-বিক্রেতার পক্ষ থেকে বিপরীত বক্তব্য পাওয়া যায়।
একাধিক বেপারি দাবি করেন, বন্যা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পশু পালন ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই এবার পছন্দের পশু কোরবানি দিতে হলে বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
অন্যদিকে হাটের পরিস্থিতি যাচাই করতে আসা একাধিক ক্রেতা দাম নিয়ে অসন্তোষ জানালেও হতাশ হচ্ছেন না কেউই। তাদের আশা, অন্যান্যবারের মতো শুরুতে বেপারিরা দাম হাঁকাচ্ছেন ঠিকই, তবে ঈদ যত এগিয়ে আসবে, ততই দাম কমবে পশুর।
আফতাবনগর হাটের হাসিলঘরে দায়িত্বে থাকা ইউনুস বলেন, ‘আজকে পর্যন্ত হাটের পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে না। ক্রেতা সমাগম শুরু হলে পরিস্থিতি বোঝা যাবে।’
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এই যেমন আজকে সকালে একজন একটা গরু কিনলেন দেখে আমার মনে হলো ওনার টাকা খরচ করার জায়গা নেই। ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে বাছুর কিনে নিয়ে গেছেন। আবার দুপুরে এত সুন্দর একটা গরু বিক্রি হলো মাত্র ৬৫ হাজারে।’
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
রাজধানীর হাটগুলোকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ১২ ঘণ্টার দুই শিফটে প্রতিটি হাটের প্রবেশ ও বাহির মুখে পাহারায় রয়েছেন একাধিক পুলিশ সদস্য। তারা যে শুধু নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন তা-ই নয়, জাল টাকা শনাক্ত করাসহ মানি স্কটিং ও সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন।
প্রতিটি হাটের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ডিএমপির পক্ষ থেকে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। কেউ সাহায্য চাইলে ব্যাংক বা নির্দিষ্ট গন্তব্যে টাকা পৌঁছে দিতে দুজন পুলিশ সদস্য তাৎক্ষণিক ছুটে যাচ্ছেন। এর বাইরেও বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করছে ডিএমপি।
কমলাপুর হাটে দায়িত্ব পালনরত মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক উজ্জল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার হাটে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে সে জন্য আমাদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা আছে। তাই বাড়তি পুলিশ সদস্য নিয়ে আমরা প্রতিটি হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি।’