আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষার ভরা মৌসুম। নদ-নদী, খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর। আকাশ থাকে মেঘলা। বৃষ্টি নামে যখন তখন। কিন্তু আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ চললেও রংপুরে নেই বৃষ্টির দেখা। প্রচণ্ড রোদ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। যেন চৈত্রের দাপট।
একদিকে গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং। এমন পরিস্থিতিতে কোথাও নেই স্বস্তি।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার রংপুরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে এই অঞ্চলে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছিল। এই অবস্থা আরও কিছুদিন থাকতে পারে।’
রংপুরে অতিরিক্ত গরমে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। রাস্তার পাশে ছায়ায় কিংবা নিজের রিকশায় বসে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে রিকশাচালকদের। যাত্রী পেলেই পেটের টানে বিশ্রাম ছেড়ে আবার ছুটছেন।
আজগর আলী নিজের রিকশায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন রংপুর জিলা স্কুলের সামনে। যাত্রী এসে আরসিসিআই স্কুলের সামনে যাবেন কি না জিজ্ঞাসা করলে, প্রথমে রাজি হননি। পরে ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া হবে বললে রাজি হন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এত গরম আর চালাইতে পারতেছি না। এই জন্যে বসি আছি। রাইতোত গরমে ঘুম হয় না। দিনে রোদ। আগে তো জীবনটা। জীবন চলে না। শরীর কুলায় না।’
রিকশাচালক মমিন হোসেন বলেন, ‘এক টিপ দিয়া আরেক টিপ দিতে পারি না। গলা-বুক শুকায় যায়। মাঝে মাঝে শরবত কিনি খাই। কিন্তু তাতেও শরীর টানে না।’
গরমে তৃষ্ণার্তদের তৃষ্ণা মেটাতে রংপুর মহানগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় শরবত বিক্রি করছেন মোক্তার হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পানি, বরফ আর বাজার থেকে লেবু এনে মিশিয়ে শরবত বানাই। প্রতি গ্লাস ১০ টাকা করে বিক্রি করি। গত কয়েক দিনে দুই হাজারের বেশি বিক্রি করতেছি।’
পথচারী আব্দুল হাকিম বলেন, ‘রিকশায় যেতে হলে হুট (ছাউনি) তুলে যেতে হয়।ওপরে রোদ, নিচে গরম। এক কথায় অসহ্য। আমার বাসায় চারজন মানুষ। তিনজনই গরমে অসুস্থ।’
এমন পরিস্থিতিতে বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান জাকির হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রোদের তাপ খুবই তীব্র। পানিশূন্যতা এড়াতে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।’
গরমের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গরমে জ্বর বা অন্য কোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’