পৌনে তিন বছর পর এমপিওভুক্ত হলো মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ২ হাজার ৭১৬ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় রয়েছে ২ হাজার ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় ৬৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এবার দেশের মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ৩২ উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠানও পায়নি এমপিওভুক্তির অনুমোদন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি জানান, দেশের মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ৩২ উপজেলা ও সিটি করপোরেশনভুক্ত ২২ থানার একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ২২৩টি ও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে ২০০টি উপজেলা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অনুমোদনের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
মন্ত্রী জানান, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ১৮টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২১৩টি, মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১৫২টি উপজেলা থেকে এমপিওভুক্তির আবেদন পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও জানান, আবেদন করার পরও এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা উপজেলার সবগুলোতে অন্তত একটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার যেকোনো একটিকে নেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় স্বীকৃতি/স্বীকৃতির সুপারিশ রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হয়েছে।
আঞ্চলিক অসামঞ্জস্য দূর করতে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ২৯টি, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনা করা হয়েছে। শিক্ষায় পশ্চাৎপদতা, অনগ্রসরতা বিবেচনায় নিয়ে এমপিওভুক্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা দশটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বাছাই করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ৬৬৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১ হাজার ১২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩৬টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০৯টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ১৮টি ডিগ্রি কলেজ।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসএসসি ভোকেশনাল অথবা দাখিল ভোকেশনাল ৯৭টি, এসএসসি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি ২০০টি, ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার দুটি, দাখিল মাদ্রাসা ২৬৪টি, আলিম মাদ্রাসা ৮৫টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৬টি ও কামিল মাদ্রাসা ১১টি।
এর আগে সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে গত বছরের ৭ নভেম্বর ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিকে সহায়তা করতে চার সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্ত করতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে বলা হয়।
আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির জন্য প্রাথমিক তালিকা করে এমপিও যাচাই-বাছাই কমিটি। এই তালিকা শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রীর অনুমোদনের পর এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন শেষে এটি চূড়ান্ত করা হয়।
সবশেষ ২০১৯ সালে ২ হাজার ৬৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এর আগে ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।
গত অর্থবছরের (২০২১-২২) বাজেট বরাদ্দের যে প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে, তাতে নতুন প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৫০ কোটি টাকা।
দেশে এ পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে এমন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৪৮টি। আর এমপিওভুক্ত হয়নি এখনও প্রায় ৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার জন্য গত বছরের ২৯ মে সংশোধিত এমপিও নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে এমপিওভুক্তির জন্য তিনটি শর্ত দেয়া হয়।
শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার—এই তিন বিষয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যায় ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় ৩০ এবং পাসের হারে ৪০ নম্বর রাখা হয়েছে। আগের নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদের ওপর ২৫ নম্বর ছিল, যা সংশোধিত নীতিমালায় বাদ দেয়া হয়েছে।
২০২১ সালের নীতিমালায় কোন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম কতজন শিক্ষার্থী থাকতে হবে, তা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী নিম্ন মাধ্যমিকে শহরে ১২০ ও মফস্বলে ৯০, মাধ্যমিকে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ৪২০ ও মফস্বলে ৩২০, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২৫০ ও মফস্বলে ২২০ এবং ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে শহরে ৪৯০ ও মফস্বলে ৪২৫ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। পাসের হার স্তরভেদে ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ করা হয়েছে।