ঈদুল আজহা যত এগিয়ে আসছে, নওগাঁর হাটগুলোতে তত বাড়ছে গরু, ছাগল, ভেড়া আমদানি। স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন ব্যাপারীরা। ক্রেতা-বিক্রেতার দরাদরিতে সরগরম পশুর হাট।
হাটে দেশি জাতের বিভিন্ন সাইজের গরু তোলা হলেও বিক্রেতারা বলছেন, মাঝারি সাইজের গরুরই চাহিদা বেশি। বড় গরু সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। তবে ঈদের দিন যত কাছে আসছে, গরুর দাম তত বাড়ছে।
মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, মহাদেবপুরের মাতাজি ও চকগৌরি, নিয়ামতপুরের ছাতড়া, বদলগাছীর কোলাহাট, রানীনগরের আবাদপুকুর ও ত্রিমোহনী হাট ঘুরে দেখা যায়, বেশ জমে উঠেছে পশু কেনাবেচা।
তবে অনেকেই বাজার যাচাই করে ফিরে যাচ্ছেন। কোরবানির আগের দিন তারা কাঙ্ক্ষিত দামে পশু কিনতে চান।
চকগৌরি হাটে গরু নিয়ে এসেছেন লোরবান হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনের তুলনায় এখন গরু-ছাগলের দাম বেশি। আমি হাটে তিনটি গরু এনেছিলাম। ৫ হাজার টাকা করে লাভে দুটি বিক্রি করেছি। আরেকটার দাম ভালো না বলায় বিক্রি করিনি। সামনে হাটে বেচব।’
আরেক গরু ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা আসায় গরুর দাম মোটামুটি ভালো আছে। তিনি হাটে আটটি গরু এনেছিলেন। মোটামুটি ভালো দামে সবগুলো বিক্রি করেছেন।
মাতাজি হাটে গরু বিক্রি করতে আসা জাফের আলী বলেন, ‘আমি এবার দেশি জাতের নয়টি গরু হাটে এনেছি। চারটি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলোর দাম করছে ক্রেতারা কিন্তু মিলছে না। দামে মিললেই বিক্রি করে দেব।’
এই হাটে প্রায় ৩ মণ ১০ কেজি ওজনের একটি লাল ষাঁড় এনেছেন জেলার মান্দা উপজেলার মৈনম গ্রামের মকবুল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনে হাটে এনে বিক্রি করি। প্রতিটা গরুতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়। এবার একটা বড় ষাঁড় এনেছি। দাম চেয়েছি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।’
দাম নিয়ে অভিযোগ আছে ক্রেতাদের। তারা বলছেন, এবার গরুর দাম একটু বেশি।
আবাদপুকুর হাটে গরু কিনতে আসা বায়েজিদ হোসেন বলেন, ‘কোরবানি করার জন্য মাঝারি সাইজের গরু খুঁজছি। এ বছর গরুর দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি মনে হচ্ছে। হাটে আসা একটি বিরক্তিকর কাজ। যেহেতু কোরবানি করতেই হবে, তাই বেশি দাম দিয়েই গরু কিনে ফেললাম।’
আরেক ক্রেতা শহিদুল হক বলেন, ‘প্রতি বছর খামার থেকে গরু কিনি। খামার থেকে কিনলে সুবিধা আছে। ঈদ পর্যন্ত গরু খামারে রাখা যায়। বাড়িতে রাখার ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে এ বছর গরুর দামটা একটু বেশি।’
বাজেট অনুযায়ী মনমতো গরু পাচ্ছেন না মো. শাহাদুল। তিনি বলেন, ‘গতবার ৮০ হাজার টাকায় গরু কোরবানি দিয়েছি। এবারও সে রকম বাজেট কিন্তু গতবারের মতো গরু পাচ্ছি না। যা পাচ্ছি দাম বেশি। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চায়।
‘আজ কিনতে না পারলে চলে যাব। পরে অন্য কোনো হাট থেকে কিনব।’
দামের বিষয়ে গরুর ব্যাপারী মকবুল জানান, এবার গরুর খাবারের দাম বেশি। তাই গরুর দামও বেশি। তা ছাড়া বাইরের বড় ব্যবসায়ীরা আসছেন। পছন্দ হলে কিছু টাকা বেশি দিয়ে কিনে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২০ হাজার ৪০২টি পশুর খামার আছে। কোরবানি উপলক্ষে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৩টি গবাদিপশু লালনপালন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ষাঁড় ৬৭ হাজার ৮১০টি, বলদ ২৪ হাজার ৬৪৪টি, গাভি ৪৬ হাজার ২৫৭টি ও মহিষ ১ হাজার ৪৮৮টি। এ ছাড়া ছাগল ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৯টি এবং ভেড়া ৩৫ হাজার ৯৭৫টি।
এ বছর জেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা ৩ লাখ ৯৫ হাজার। গত বছর ৩ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গবাদিপশু রয়েছে। দেশের সব জেলায় সমানভাবে পশু পালন না হওয়ায় উদ্বৃত্ত পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যবসায়ীরা সরবরাহ করবেন।
‘জেলায় স্থায়ীভাবে ২৮টি পশুর হাট আছে। অস্থায়ীভাবে আরও হাট বসবে। প্রতিটি পশুর হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসক আছেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে হাটে ৩ থেকে ১০ জন চিকিৎসকের একটি টিম কাজ করছে।’