বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজী আনিসের আত্মহত্যা পাওনা টাকা না পেয়ে: র‍্যাব

  •    
  • ৬ জুলাই, ২০২২ ১৪:১৯

হেনোলাক্সে বিনিয়োগ করা অর্থের কিছু অংশ গাজী আনিসকে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন৷ এ জন্য জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছিলেন আনিস। ঘটনার দিন অর্থাৎ ৪ জুন আনিসের পাওনা টাকার আংশিক পরিশোধের জন্য চেক দেয়ার কথা ছিল নুরুল আমিনের।

প্রসাধনসামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি হেনোলাক্সের মালিক নুরুল আমিনের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ৪ জুন পাওনা টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী গাজী আনিস।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

হেনোলাক্সে বিনিয়োগ করা অর্থের কিছু অংশ গাজী আনিসকে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন৷ এ জন্য জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছিলেন আনিস।

ঘটনার দিন অর্থাৎ ৪ জুন আনিসের পাওনা টাকার আংশিক পরিশোধের জন্য চেক দেয়ার কথা ছিল নুরুল আমিনের। কিন্তু এদিন তাদের কাছ থেকে ওই চেক না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত আনিস প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

মঙ্গলবার রাতে আমিন-ফাতেমা দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য গেল ২৬ জুন থেকে গাজী আনিস ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে একাধিকবার আলোচনার পর গাজী আনিসকে ৪ জুলাই আংশিক টাকা পরিশোধের জন্য চেক প্রদান করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন আমিন দম্পতি। সারা দিন অপেক্ষার পর তাদের কাছ কাঙ্ক্ষিত চেক না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গাজী আনিস।’

এদিকে নূরুল আমিন ও তার স্ত্রী র‍্যাবের কাছে জানান, আনিসের পাওনা মোট টাকার হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত ছিল তাদের। আনিস প্রাপ্য টাকার অনেক বেশি দাবি করেছিলেন। এটি সমাধান না হওয়ায় তারা সেদিন চেক দিতে পারেননি।

আনিসের আত্মহত্যার ঘটনা জানার পর ভয় পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলেই রাজধানীর কাকরাইলে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে উত্তরায় গিয়ে আত্মগোপন করেন আমিন দম্পতি, জানান র‍্যাবের মুখপাত্র। পরবর্তীতে মামলা হওয়ার পর গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের দুজনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়।

আনিসের হেনোলাক্সে বিনিয়োগের বিষয়ে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘২০১৭ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে গাজী আনিসের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্য এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। আমিন দম্পতি ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য ভারতে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে একই সাথে অবস্থানকালে আসামিদ্বয় ভিকটিমকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন। ভিকটিম প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরবর্তীতে রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।

‘পরবর্তীতে তাদের প্ররোচনায় ভিকটিম আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিনামা হয়নি। বিনিয়োগ-পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য ভিকটিম বারবার আসামিদ্বয়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু আসামিদ্বয় গড়িমসি করতে থাকেন।

‘প্রথমে কয়েক মাস লভ্যাংশ বাবদ আনিসকে টাকা দিলেও একসময় সে টাকা দেয়াও বন্ধ করে দেন নুরুল আমিন। সবশেষ লভ্যাংশসহ আনিসের ন্যায্য পাওনা ৩ কোটি টাকার অধিক বলে সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। এর আগে কয়েক দফার চেষ্টায় ৭৪ লাখ টাকা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন আনিস। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য কুষ্টিয়ায় দুটি মামলার পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন আনিস।

খন্দকার আল মঈন জানান, আনিসের বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকা ধার করা ও পাওনাদারদের নিয়মিত লভ্যাংশ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি থাকায়, তারাও আনিসের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এতে দিশাহারা আনিস গত ২৬ জুন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

ভিকটিম গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। ভিকটিম সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

গ্রেপ্তার নুরুল আমিনের উত্থান সম্পর্কে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘তিনি ঢাকা বাংলাদেশ হোমিও হল থেকে হোমিও ডিগ্রি (ডিএইচএমএস) অর্জন করেন। এরপর ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম কয়েক বছর বাজারে প্রসাধনী পণ্যের কোনো প্রতিযোগী না থাকায় একচেটিয়া ব্যবসা করে নুরুল আমিনের হেনোলাক্স।

পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরণ করেন তিনি। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে সে আমিন হারবাল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৬ সালে হেনোলাক্স ও আমিন হারবালের সব কসমেটিকসের ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর