জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করা কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গাজী আনিসুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করে পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় আনিসের মরদেহ ফ্রিজিং ভ্যানে করে এলাকায় আনা হয়। এ সময় এত মানুষের সমাগম হয় যে ভিড় সামলানো কঠিন হচ্ছিল। গাজী আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে গাজী আনিসের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে পান্টিতে পৌঁছায়। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। একই সঙ্গে অভিযুক্ত হেনোলাক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের কঠোর শাস্তির দাবি করেন আনিসের বড় ভাইসহ এলাকাবাসী।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পান্টি মসজিদে জানাজা শেষে পান্টি ঈদগাহ গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় রাজনৈতিক নেতা, এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
এইচএসসি পরিক্ষার্থী আঁচল, এসএসসি পরিক্ষার্থী অহনা ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী অবনির বাবা গাজী আনিস কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি জীবনের উপার্জিত সর্বস্ব হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানিয়ে গেছেন।
মৃত্যুর আগে গাজী আনিস অভিযোগ করে গেছেন, হেনোলাক্স কোম্পানিতে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। লভ্যাংশসহ সেই টাকা ৩ কোটির ওপরে পৌঁছালেও নুরুল আমিন কোনো অর্থ ফেরত দেননি। এ নিয়ে মামলা করেও লাভ হয়নি।
এই হতাশা থেকেই সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দেন কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিস। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, আনিসের মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন আনিসের বড় ভাই নজরুল ইসলাম। মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গায়ে আগুন দেয়ার পর হাসপাতালে নেয়ার পথে গাজী আনিস। ছবি: নিউজবাংলা
এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী আনিসকে হারিয়ে তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম শঙ্কায় স্ত্রী স্বপ্না খাতুন। অবিলম্বে পাওনা টাকা ফেরতসহ আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন তিনি, তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
গাজী আনিসের বড় মেয়ে আঁচলের দাবি, কেউ তার বাবার শরীরে আগুন দিয়েছে নাকি তিনি নিজেই দিয়েছে এ বিষয়টিও তদন্তের।