বেপরোয়া গতির জন্য সমালোচিত এনা পরিবহনের ঈদযাত্রার বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যাত্রীদের কাছে দুই উপায়ে বিক্রি হচ্ছে এই টিকিট। কাউন্টারে ২৬৭ টাকার পথ ২৬০; তবে চুক্তিতে এই টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
বুধবার সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ত উল্যাহর মালিকানাধীন এনা পরিবহনের এ বাস কাউন্টারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সড়কে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে বেশ কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে নিউজবাংলা।
যাত্রীরা বলছেন, ময়মনসিংহ রুটে যেহেতু ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় না, তাই টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীর চাপ ও যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি হওয়ায় বাসের সহকারীরা যাত্রীদের জিম্মি করে এই কন্ট্রাক্ট সিস্টেম (চুক্তির পদ্ধতি) চালু করছে।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কাউন্টার থেকে ২৬০ টাকায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যাত্রীরা বেশি টাকা দিয়ে গেলে তাদেরইবা কী করার আছে?
ময়মনসিংহের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সকাল ৯টার দিকে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকিট ছাড়া গেলে ৫০০ টাকায় যাওয়া যাইব। ওই যে হেলপার বলতেছে। লাইনে খাড়াইয়া কাটলে ২৬০ টাকা। কন্ট্রাকে ৫০০ টাকা।’
টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা
কারও কাছে অভিযোগ করেছেন কি না এমন প্রশ্নে নজরুল বলেন, ‘হেরা এহন আইবো না তো। হেরা এহন আইতো না। হেরার (বাস) লগে সরকারের ভালা খাতির। কাউন্টার লগে তো ইতা করছে হেরা দেখে না। তিন-চারজনে টিকিট দিলে তো এত সময় লাগে না। ইচ্ছা কইরা দেরি করছে। একটা টিকিট ১০ মিনিট, ২০ মিনিট পরে দেয়। কী কইয়াম কন? ’
নজরুল ইসলামের অভিযোগের সত্যতা মেলে ১০ মিনিট পরই। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৬৭ টাকা হলেও এনা পরিবহনের কাউন্টার থেকে নেয়া হচ্ছে ২৬০ টাকা। তবে বাস সংকট এবং অধিক টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীর চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে কাউন্টার থেকে এক হাত সামনেই ২৬০ টাকার টিকিটের দাম ৫০০ করে চুক্তিতে যাত্রী তুলছিলেন পরিবহনের সহকারীরা।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে এনা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৫৪২৩৮ গাড়িতে এমন দ্বিগুণ ভাড়ায় চুক্তিতে তিন যাত্রীকে তুলতে দেখা যায়। অথচ তখনও শতাধিক মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে।
এনার এই বাসে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে উঠেছেন যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা
সকাল পৌনে আটটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছেন মাহমুদুল ইসলাম। তবে টিকিট হাতে অপেক্ষা করছিলেন ময়মনসিংহের এই যাত্রী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্যামের জন্য অনেক বাস আসতে পারতেছে না৷ তবে ঈদে বাড়ি যাইতে পারতেছি এটাই আনন্দ হইতেছে।’
এসব বিষয়ে এনা পরিবহনের অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজার রিয়াজউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কাউন্টারে ২৬০ টাকা করেই ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রীরা যদি বেশি ভাড়া দিয়ে যায়, আমাদের কী করার।’
দেরি করে টিকিট দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গাড়ি তো আসতেছে না। গাড়ি না থাকলে টিকিট দেয়া বন্ধ থাকে। সকাল ৯টা ২৫ পর্যন্ত ২৭টি গাড়ি ছেড়ে গেছ।’
ঢাকা-ময়মসিংহ রুটে ঈদে অগ্রিম টিকিট দেয়া হয় না বলে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে এই কাউন্টারে ভিড় থাকলেও বিপরীত চিত্র একই টার্মিনালের অন্য কাউন্টারে।ঢাকা-নাটোর-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের একতা কাউন্টারে শুধু তারাই অপেক্ষা করছেন, যারা আগেই অগ্রিম টিকিট পেয়েছিলেন।
কাউন্টারটির বুকিং মাস্টার স্বপন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রীর ওইরকম চাপ নাই। আমরা তো ১৫ দিন আগেই অগ্রিম টিকিট দিই। এখন শুধু যাত্রী যাওয়ার পালা। ‘অগ্রিম টিকিটের জন্য কেউ আসছে না। যারা অগ্রিম টিকিট কেটেছে তাদেরকে পাঠাচ্ছি৷ ভাড়া বাড়ে নায়৷ চাঁপাইয়ের ভাড়া সাড়ে ৭০০ টাকা, তাই নিচ্ছি।’