বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্যার মধ্যে লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ দ্বিগুণ

  •    
  • ৬ জুলাই, ২০২২ ০৯:৪৪

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেল সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাপ কম। এ কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বন্ধ আছে। এতে প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই ঘাটতির কারণেই লোডশেডিং হচ্ছে।’

ঘরে ভেতরে পানি, সড়কেও পানি। এই নিয়েই খুব দুর্ভোগে আছি। সেই দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে লোডশেডিং। দিনে অন্তত ৬ থেকে ৭ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে।এ অবস্থার কথা জানিয়ে সিলেট নগরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামাল আহমদ বলেন, ‘রাত হলে অবস্থা বেশি খারাপ হয়। চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। পানির কারণে তখন ঘরে থাকতেও ভয় করে।’চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে সিলেটে বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, উৎপাদন ঘাটতির কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। উৎপাদন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে।এদিকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেট। গত ১৫ জুন থেকে বন্যা দেখা দিলেও এখনো অনেক এলাকার বাড়িঘরে পানি রয়েছে। রাস্তাঘাটেও ডুবে আছে পানির নিচে। সোমবার থেকে দাবদাহ বেড়েছে সিলেটে। বন্যা আর গরমের মধ্যে লোডেশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা আশফাক আহমদ বলেন, ‘৮দিন পর ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন ঘর পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। কিন্তু ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে পরিচ্ছন্নতার কাজ করা যাচ্ছে না। গরম আর অন্ধকারের কারণে ঘরে কাজ করা যাচ্ছে না।‘বন্যায় ফ্রিজসহ অনেক আসবাপত্র পত্র নষ্ট হয়েছিলো। এগুলো দুদিন আগে মেরামত করেছি। এখন লোডশেডিংয়ের কারণে আবার নষ্ট হওয়ার উপক্রম।’

নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতিটি এলাকায় দিনে ৫ থেকে ৬ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। প্রতিবার আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টা পর্যন্তও বিদ্যুৎ থাকছে না। দিনের চেয়ে রাতেই লোডশেডিং বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।নগরের জিন্দাবাজারের পোশাক ব্যবসায়ী রাহাত আহমদ বলেন, ‘বন্যার কারণে এমনিতেই ব্যবসায় মন্দা। তার উপর বিদ্যুতের লোকচুরির কারণে আরও সমস্যায় পরেছি। দিনে-রাতে কয়েকবার বিদ্যুৎ যায়। ফলে জেনারেটর চালিয়ে রাখতে হয়। এতে খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’লোডশেডিংর কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জানিয়ে নগরের কমতলী এলাকার সেলুন ব্যবসায়ী নিখিল চন্দ বলেন, ‘বিদ্যুৎ চলে গেলে কোনো গ্রাহক সেলুনে আসে না। আবার ব্যবসার পিক সময়ে বিদ্যুৎ থাকে না। এতে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।’এর কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত শনিবার থেকে সিলেটে দিনে ৫০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। তেল ও গ্যাস সংকট নিরসন হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং করার নির্দেশনা দিয়েছে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা বিসিক শিল্প নগরীর ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফিজা অ্যান্ড কোং এর সত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘বন্যার কারণে এমনিতেই আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক জায়গায় পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না। এখন লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সব দিকেই লোকসানের মুখে পড়েছি।’রান্না শুরু করলেই বিদ্যুৎ চলে যায় জানিয়ে নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার গৃহিনী সুষমা দাশ বলেন, ‘রান্নার সময়, খাওয়ার সময় কিংবা ঘুমানোর সময় নিয়ম করে বিদ্যুৎ যাবেই। কোনো কাজই শান্তি মতো করার উপায় নেই।এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেল সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাপ কম। এ কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বন্ধ আছে। এতে প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই ঘাটতির কারণেই লোডশেডিং হচ্ছে।’তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘাটতি পূরণ করতে সারা দেশে বিদ্যুৎ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। তাই পিক আওয়ারে লোডশেডিং হবে। তেল গ্যাসের সংকট সমাধান না হলে এভাবেই চলতে হবে।প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘সিলেটে ৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে বলা হয়েছে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে। এই লোডশেডিং সিলেট কুমারগাও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা তাদের নির্দেশনা না মানলে এনএলডিসি থেকে আমাদের গ্রিডের বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে দেবে।’তিনি বলেন, ‘তেল কিনতে একটু সময় লাগবে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে তেল ক্রয়ের। তাই কবে লোডশেডিংয়ের কবল থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। তবে বিবিয়ানাতে প্লান্ট চালু হলে সংকট কিছুটা কমবে।’

এ বিভাগের আরো খবর