বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লোডশেডিং: বিদ্যুতের চাহিদাও কমানোর চেষ্টা

  •    
  • ৫ জুলাই, ২০২২ ২৩:০১

বিদ্যুতের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট কমাতে চাইছে। ঈদের পর রাত আটটায় দোকান বন্ধ ছাড়াও আরও নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি এক হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতি সারা দেশে যৌক্তিকভাবে লোডশেডিং দেয়া হলে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।

জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার রয়েসয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিদ্যুতের যাওয়া-আসার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।

কয়েক বছর ধরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের অভ্যাসের কারণে বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, সামাজিকমাধ্যমে অসন্তোষের কথা তুলেও ধরছেন হাজারো মানুষ।

সরকার জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, বিশেষ করে এলএনজির দামে লাফ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়লা সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়েছে।

পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সেই জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত।

বিদ্যুতের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট কমাতে চাইছে। ঈদের পর রাত আটটায় দোকান বন্ধ ছাড়াও আরও নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি এক হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতি সারা দেশে যৌক্তিকভাবে লোডশেডিং দেয়া হলে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে সব মার্কেট, শপিংমল রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ঈদের কারণে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

কথা হচ্ছে, কত দিন এভাবে চলবে আর পরিস্থিতির উত্তরণ কবে। বিদ্যুৎসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রশ্নের সহজ জবাব নেই। সব নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর।

যাওয়া-আসা বারবার, তবে পরিস্থিতি এখনও অসহনীয় নয়রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা যে তথ্য জানিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সব এলাকাতেই বিদ্যুতের যাওয়া-আসার সমস্যা আছে। তবে একটানা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না-পরিস্থিতি এমন নয়। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত একনাগাড়ে বিদ্যুৎ যাওয়ার কথাই বলছেন গ্রাহকরা। কোথাও কোথাও এক-দুইবার এক ঘণ্টার লোডশেডিং হচ্ছে।

পোস্তগোলার হাসনাবাদের বাসিন্দা মোমেনা আক্তার মিতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর হয়েছে কারেন্ট তো যেতই না। গত দুই দিন হলো আবার লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গতকাল রাতে গেছে। দিনের বেলা গেছে।’

নাখালাপাড়ার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, ‘এখন কারেন্ট গেলে আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা থাকে না। আজকেও দুইবার লোডশেডিং হয়েছে। দিনে দুইবার করে কারেন্ট যায়।’

কাঁঠালবাগানের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম টিংকু বলেন, ‘প্রতিদিন একবার দুবার যাচ্ছে। গত মাসে ১০ দিনে একবার-দুইবার বিদ্যুৎ গেলেও এ মাসের শুরু থেকেই প্রতিদিন যাচ্ছে।’

বিজি প্রেস স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা তাসিন মল্লিক বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা লোডশেডিংয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত না। দুইবার লোডশেডিং হওয়ার পর মনে হয়েছে, না কোনো একটা কারণে হচ্ছে। পরের দিন দেখলাম আবার হলো। গতকাল রাতে দুইবার গেছে। আজকে সকালে একবার কারেন্ট চলে গেছে। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রায় আধা ঘণ্টা পর আসে। গত মাসে এ রকম বিভ্রাট ছিল না। দুই-তিন দিন হলো এ রকম শুরু হয়েছে।’

গোড়ানের বাসিন্দা রাগিব আহমেদ বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বাসায় লোডশেডিং হচ্ছে। কখনও বিদ্যুৎ গিয়ে আধা ঘণ্টা থাকে। কখনও ৪০ মিনিট। আবার এক ঘণ্টা। রাতে যায়। দুপুরে যায়। দিনে যাচ্ছে একবার। রাতে যাচ্ছে একবার।’

আধা ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না বলে জানান বসিলা মেট্রো হাউজিংয়ের বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত মাসে হঠাৎ একবার গেলেও এ মাসে দিনে দুবার করে বিদ্যুৎ যাচ্ছে।’

মোহাম্মদপুরের মোহাম্মাদিয়া হাউজিং লিমিটেডের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহে একবার-দুবার বিদ্যুৎ চলে গেলেও এ সপ্তাহে বেশি যাচ্ছে। একবার গেলে মিনিমাম আধঘণ্টা কারেন্ট থাকে না।’

‘উৎপাদন ব্যয় গ্রাহকের সাধ্যের বাইরে নিতে চাই না’বিদ্যুতের এই সংকটে সরকারের পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা বৈশ্বিক সংকট, আমাদের একার নয়। আমরা তিন দিন ধরে এই সংকট মোকাবিলা করছি, আর সারা বিশ্ব দুই মাস ধরে এই সংকট মোকাবিলা করছে।

‘সবাই শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি জানে। জ্বালানির অভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়েছে, পাকিস্তানেও একই অবস্থা। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ বাদেই জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে পরিকল্পিতভাবে লোডশেডিং করা লাগছে। সেই জায়গা থেকে আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বিগত দিনগুলো কাটিয়ে ফেলছি।’

তিনি বলেন, ‘জ্বালানির দাম বাড়তি থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে, যা গ্রাহকের বহন করার সক্ষমতা থাকবে না। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে রেশনিংয়ে যাচ্ছি আমরা।’

কবে এই সংকটের সমাধান হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই সংকটটা বৈশ্বিক, ফলে তা কবে শেষ হবে তা আনসারটেইন।’

ঘাটতি কতপাওয়ার সেলের এই কর্মকর্তা জানান, দেশে চাহিদা রয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন সাড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজারের মতো। ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো ঘাটতি থাকছে।

এর ঘাটতির মধ্যে অর্ধেক, অর্থাৎ ১ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা সরকার কমিয়ে ফেলতে চায় নানা পদক্ষেপে। বাকি ১ হাজার ‘যৌক্তিকভাবে’ বিতরণ করলে পরিস্থিতি সহনশীল পর্যায়ে থাকবে বলেও মনে করছে সরকার।

তিনি বলেন, ‘পুরোটাই যে রেশনাইজড হবে তা নয়। আমরা ডিমান্ডসাইড ম্যানেজমেন্ট করার চিন্তাভাবনা করছি। ইতোপূর্বে আমরা দোকানপাট, মার্কেট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত আছে। ১০ জুলাইয়ের পর এইসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ছাড়াও আরও কিছু ডিমান্ডসাইড ম্যানেজমেন্ট করব।’

কেবল এই একটি পদক্ষেপে ১ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা কমানো যাবে না। এই অবস্থায় জনসচেতনতায় জোর দেয়ার কথাও বলেন। এ জন্য গণমাধ্যমসহ নানা মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচার চালানো হবে।

পাওয়ার সেল প্রধান বলেন, ‘আমাদের প্রাত্যহিক অভ্যাসের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। দেখা যায়, বাসাবাড়ি, অফিসে লোক না থাকলেও বাতি, ফ্যান, এসি চালু থাকে। এইসব বদঅভ্যাস ছাড়তে হবে।

‘আমরা মিতব্যয়ী হলে এখন যে শর্টেজ আছে, সেই জায়গা থেকে চাহিদা কমাতে পারলে শর্টেজটা অনেক কমে যাবে, যা আমাদের সহনশীল অবস্থায় আনবে। আমরা আপাতত এই পলিসি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘২০০৯ সালের আগে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং আমরা বহন করেছি। এখন এক ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টা লোডশেডিং বহন করা খুব একটা কঠিন হবে না।’

আন্তর্জাতিক বাজারের চিত্র সুখকর নয়আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনছে না বাংলাদেশ। জুন মাসে তিনটি কার্গো কেনা হয়েছিল। এরপর আর কেনা হয়নি।

দাম না কমলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এলএনজি সরবরাহ কমায় গ্যাস ঘাটতি বেড়েছে ৩০-৩৫ কোটি ঘনফুট। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন বৃদ্ধিতে যে উদ্যোগই নেয়া হোক না কেন, তা কোনোভাবেই আগামী কয়েক মাসের চেষ্টায় ১০-১৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়বে না।

জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে পারছে না পিডিবি।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং কোভিড-পরবর্তী চাহিদা বাড়ায় আগামী কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকবে বলেই পূর্বাভাস আছে।

এ বিভাগের আরো খবর