বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রচণ্ড লোডশেডিং হচ্ছে, এটা ভয়াবহ: ফখরুল

  •    
  • ৫ জুলাই, ২০২২ ১৬:২৭

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ব্যর্থতা। এই পাঁচ বছরে বিএনপি সরকার একটিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারেনি, উল্টো এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যাদেশ বাতিল করেছে। বিদ্যুতের দাবিতে এখানে সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সেই সরকার। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও হয়েছে।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতির হঠাৎ করে অবনতিকে ভয়াবহ বলে ‍উল্লেখ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, বিদ্যুতের উন্নয়নের কথা যে বাকসর্বস্ব, সেটি প্রমাণ হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এই মন্তব্য করেন।

গত ২৫ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে টানা আট দিন উত্তরার বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নেন তিনি। করোনামুক্ত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন। আগের দিন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘প্রচণ্ড লোডশেডিং হচ্ছে- এটা ভয়াবহ। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতের যে কথা, আজকের এই অবস্থা (লোডশেডিং) প্রমাণ করে যে আমরা যে কথাগুলো বলে আসছি- সেগুলো বাকসর্বস্ব কথা। এগুলো (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, এসব করে নিজেদের পকেট ভারী করা, বিদেশে গিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা।’

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ব্যর্থতা।

এই পাঁচ বছরে বিএনপি সরকার একটিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারেনি, উল্টো এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যাদেশ বাতিল করেছে। বিদ্যুতের দাবিতে এখানে সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সেই সরকার। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও হয়েছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি নানা পদক্ষেপ নেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এই সময়ে কয়েক গুণ বেড়েছে এবং এটাকে সরকার সাফল্য হিসেবে প্রচার করে আসছে।

তবে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এই কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপকরণগুলো সেগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। যেমন ডিজেলের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, এলএনজির দামসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কয়লা এখন প্রায় পাওয়াই যায় না।’

ফখরুল অবশ্য মনে করেন বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়ন হয়নি। পুরো খাতটিই ভঙ্গুর। তিনি বলেন, ‘এখন এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে আমরা যেটা বলে আসছিলাম আল্টিমেটলি দেখা যাবে যে সবই একেবারে ভঙ্গুর অবস্থা। সেই ভঙ্গুর অবস্থার দিকেই আমরা চলে যাচ্ছি।

পদ্মা সেতুতে কাজ হবে না

বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র ‘অবরুদ্ধ’ দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, এই পরিস্থিতি রেখে হাজারটা পদ্মা সেতু করলেও বর্তমান সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে না।

‘দেশের জনগণ আমাদের পাশে থেকে বারবার ভোট দিচ্ছে। আমাদের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন দিয়ে দেখুক না উনাদের প্রতি কতটুকু আস্থা আছে?

‘হাজারটা পদ্মা সেতু করেও কোনো লাভ হয় না। আইয়ুব খান যে উন্নয়ন করেছিল পাকিস্তান আমলে… কিন্তু জনগণের রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয়, জনগণ যদি গণতন্ত্রকে না পায়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, তার অধিকার যদি না থাকে, তার ভোটাধিকার না থাকে সেখানে কিন্তু কোনো লাভ হয় না।’

মানুষ ভোট দিচ্ছে কোথায়- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি নেতা বলেন, ‘জনগণের আস্থাটা গ্রহণ করছেন তিনি কীভাবে? তিনি তো কাগজে-কলমে সিল মেরে আগের রাত্রে ভোট দিচ্ছেন, ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের মতো আরকি।’

রিজার্ভের ৭ বিলিয়ন ডলার সরকারসংশ্লিষ্টদের পকেটে

বাংলাদেশের বিজার্ভ থেকে সরকারঘনিষ্ঠদের ঋণ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৪ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার।

‘ওই ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সড লোন অধিকাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আইএমএফ এই ধরনের ঋণের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বলললেই চলে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার অর্থনীতির সকল নিয়মকানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি ভঙ্গ করে শুধুমাত্র নিজেদের ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ইডিএফ্ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সামাজিক, অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির গতকালের সভায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।'

নতুন করে জনশুমারির দাবি

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশজুড়ে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনামন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকে বোঝা যায় কী অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে জনশুমারি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ার প্রকৃত তথ্য কখনই পাওয়া সম্ভব হয়নি।

‘জনগণকে এবং বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতিবিবর্জিত কার্য্কলাপ করে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সকল তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিএনপি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহগণনার ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছে।’

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা নির্ভর করবে নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হবে কি না তার ওপর। যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হয় তাহলে আমাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই দৃশ্যমান হবে। আর যদি না হয় হবে না।

‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি বাংলাদেশে যদি একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয় এখানে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার থাকতে হবে। তা না হলে এখানে কোনোমতেই আপনার যদি একেবারে স্বর্গ থেকে নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আসেন তাহলেও সেটাকে সুষ্ঠু করতে পারবেন না- ইমপসিবল।'

দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকার ব্যর্থ

সিলেট অঞ্চলে বন্যার্তদের পাশে সরকার দাঁড়ায়নি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনে সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়।

‘অবিলম্বে দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহনির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থার জোর দাবি জানানো হয় স্থায়ী কমিটির সভায়।'

সম্প্রতি সাভারে স্কুলশিক্ষক হত্যা, নড়াইলে অধ্যক্ষকে অপমানসহ সারা দেশে সামাজিক নৈরাজ্যের চিত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফখরুল। জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এই বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, ‘এই অনির্বাচিত সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা না থাকায় সমাজের সকল পর্যায়ে নীতিনৈতিকতার চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে।’

ফখরুল বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টি করলেই সমাজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসতে পারে বলে আমরা বিশ্বাস করি।'

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর