ঈদযাত্রার প্রথম দিন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে তেমন ভিড় লক্ষ করা যায়নি, তবে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। অনেকক্ষণ অপেক্ষায় থাকার পরও কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দেখা পাননি অনেকে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টার আগে প্লাটফর্মগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। এ সময় স্টেশনের চিত্র অন্য স্বাভাবিক দিনের মতো মনে হয়েছে।
ঈদযাত্রার প্রথম দিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, কর্মজীবী মানুষের অনেকেই পরিবারকে আগেভাগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এ সময় বাড়ি যেতে দেখা যায়।
আগাম টিকিট বিক্রির শিডিউল অনুসারে ঈদযাত্রার প্রথম দিন আজ। গত ১ জুলাই ঢাকা থেকে সারা দেশের ট্রেনের আজকের টিকিট বিক্রি করে রেলওয়ে। ২ জুলাই বিক্রি করা হয় ৬ জুলাইয়ের টিকিট, ৩ জুলাই বিক্রি করা হয় ৭ জুলাইয়ের টিকিট। ৪ জুলাই বিক্রি করা হয় ৮ জুলাইয়ের টিকিট।
প্রথম দিনে মোট ৩৭ জোড়া ট্রেন কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যাবে। শেষ দিন হিসেবে আজ বিক্রি হচ্ছে ৯ জুলাইয়ের টিকিট।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাবে নীলফামারীর চিলাহাটি। ট্রেনটি ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়।
নীলফামারীর সৈয়দপুর যাবেন রাসেল। তিনি জানান, ট্রেনটি ৬টা ৩৪ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যাচ্ছে ।
ওই ট্রেনে জয়পুরহাট যাবেন হাসিবুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ট্রেনটি ৭টা ১৪ মিনিটে স্টেশনে এসে পৌঁছায়।
ঈদযাত্রার প্রথম দিনই এমন ভোগান্তিতে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কী আর বলব। আমাদের দেশে তো কোনো সিস্টেমই ঠিক নাই।’ আর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটা সব সময় দেরি করে আসে বলে তার দাবি।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজারগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ৭টা ৫৫ মিনিটে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। ওই ট্রেনে জামালপুর যাচ্ছেন মিয়াজুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০ মিনিট ধরে বসে আছি। কিন্তু ছাড়ার কোনো নাম নেই।’
চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসে বাড়ি যাচ্ছেন রাবেয়া খাতুন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার ঈদে একটু দ্রুতই বাড়ি যাচ্ছি। ঈদে বাড়ি যেতে পারার মধ্যে সব সময়ই ভালো লাগা কাজ করে। বেশ ভালই অনুভূত হচ্ছে। কোনো জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়নি।’
নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শোভন ইসলাম একতা এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী যাবেন। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ট্রেন সকাল ১০টায়। কিন্তু একটু আর্লি স্টেশনে চলে এলাম। বাড়ি যাব তাই খুশি লাগছে।’
সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনএ পরিবারকে উঠিয়ে দিতে এসেছেন কামরুল ইসলাম। তিনি রাজধানীর বনানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্যামিলিকে আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি পরে যাব। পরে একলা গেলে ভোগান্তি কম হবে।’
সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ ইসলাম। তিনি যাবেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঈদযাত্রার প্রথম দিনে বাড়ি যাচ্ছি। ট্রেন ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এখন ৮টা ৩৫ মিনিট বাজে, কিন্তু ট্রেনের কোনো পাত্তা নেই। রেলের এই অবস্থা হয়তো কোনো দিন পরিবর্তন হবে না।’
সোয়া ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়নি।
ওই ট্রেনে লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেন যাবেন কুষ্টিয়ার পোড়াদহে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেন ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা। কিন্তু ট্রেন এখনো আসেইনি। এত দূর থেকে এসেও ঈদযাত্রার প্রথম দিনই ভোগান্তিতে পড়লাম।’
সকালে ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টায় কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথম কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়ে তার নির্ধারিত সময় ৬টা ২০ মিনিটে। ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর ছাড়ে দেড় ঘণ্টা পর।
এদিকে, এক কিংবা দেড় ঘণ্টা দেরিকে শিডিউল বিপর্যয় বলতে নারাজ কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে ৩টি ট্রেন বিলম্বে গিয়েছে এটাকে আসলে শিডিউল বিপর্যয় বলে না। আমাদের অপারেশনাল বিলম্ব ছিল। আশা করি আগামী দিনগুলোতে এটা ঠিক হয়ে যাবে।’