জাতীয় প্রেস ক্লাবে গায়ে আগুন দেয়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গাজী আনিসকে বাঁচানো গেল না।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রেস ক্লাবে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা গাজী আনিসের শরীরের ৯০ শতংশ দগ্ধ ছিল। রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সকাল সোয়া ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টেই তিনি মারা যান।’
জানা গেছে, প্রসাধনসামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি হ্যানোলাক্সে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশায় সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ৫০ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী।
তাৎক্ষণিক আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর পর পুলিশ তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তার মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্বজনরা জানান, গাজী আনিসুর রহমান কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামে। তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন বিশ্বাস মারা গেছেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে আনিস তৃতীয়।
আনিসের চাচাতো ভাই কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক জাহিদ হোসেন জাফর বলেন, ‘আনিসের গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ কম। তার ভাইদের মধ্যে শুধু একজন গ্রামে থাকেন। বাকিরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে আছেন। আনিস মাঝে মাঝে গ্রামে এলেও আমাদের সঙ্গে খুব একটা মিশত না। গ্রামে এসে খরচ করত দেখতাম। কিছু একটা ব্যবসা-বাণিজ্য করে বলে শুনেছি।’
স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে আনিসের দূরত্ব ছিল জানিয়ে জাফর বলেন, ‘কখনো ঢাকায়, আবার কখনো কুষ্টিয়ায় আনিস সিঙ্গেল বাসায় থাকত।’
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসান মেহেদী বলেন, ‘গাজী আনিসুর রহমান ১৯৯১ সালে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সেই কমিটিতে আমি ছিলাম সাধারণ সম্পাদক। এর আগে আনিস কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন। পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক এ চাকরি পেয়ে রাজনীতি থেকে দূরে চলে যান।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হচ্ছে গাজী আনিসকে। ফাইল ছবি
‘গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে বছর দুই আগে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। কিন্তু আশানুরূপ পদ-পদবি না পেয়ে আবার ব্যবসায় মনোযোগী হন। গাজী আনিস দক্ষ ছাত্রনেতা ছিলেন, তিনি আত্মহত্যা করবেন এমনটা ভাবা কঠিন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচার দাবি করছি।’
গাজী আনিস সর্বশেষ ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছিলেন। আবার অংশীদারিতে ব্যবসা করছিলেন। হ্যানোলাক্স কোম্পানিতে তিনি এক কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এই টাকা ফেরত না পেয়ে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন বলে জানান স্বজনরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সোমবার বিকেলে হঠাৎ করেই গাজী আনিস নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আশপাশের মানুষ দৌড়ে গিয়ে আগুন নেভানোর উদ্যোগ নেন। ইতোমধ্যে তার শরীরের অনেকটা দগ্ধ হয়।
উদ্ধারকারীদের একজন স্বদেশ বিচিত্রার রিপোর্টার। তিনি বলেন, ‘বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়।
‘হাসপাতালে আনার পথে ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। দগ্ধ ব্যক্তি জানান, তিনি হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাবেন। ওই কোম্পানি পাওনা টাকা দিচ্ছে না। এ নিয়ে চার মাস আগে তিনি মানববন্ধন করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। সেই হতাশা থেকে তিনি গায়ে আগুন দিয়েছেন।
গাজী আনিসের ভাই গাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন। তিনি হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাবেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই টাকা উদ্ধারে চেষ্টা করে আসছিলেন।’
শাহবাগ থানার এসআই গোলাম হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, আত্মহত্যার চেষ্টাকারী আনিস হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা পান। ওই টাকা উদ্ধারে দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়ে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন।’
জানা গেছে, পাওনা টাকা উদ্ধারে গাজী আনিস দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। গত ২৯ মে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রেই ২০১৮ সালে তিনি এই টাকা হেনোলাক্স গ্রুপে বিনিয়োগ করেন।