গত ৩ দিন ধরে দিন রাত সবসময়ই লোডশেডিং হচ্ছে রাজশাহীতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকছে বিভিন্ন এলাকা। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের ওপরও প্রভাব পড়ছে।
লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগে শহরের অনেককেই মেজাজ হারাতে দেখা গেছে। নগরীর টিকাপাড়া এলাকার ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘কারেন্টের কথা আর বলবেন না ভাই। সারা দিন-রাতে তিন চার ঘণ্টাও ঘুমাতে পারছি না। বিদ্যুতের যাওয়া আসা লেগেই আছে। না ঘুমাতে পারছি, না বসতে পারছি। চরম এক কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। মাঝরাতে যখন বিদ্যুৎ চলে যায়, তখন কী যে কষ্ট বলে বোঝাতে পারবো না। এমন হলে ঘুম থেকে ওঠে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে।’
চন্দ্রিমা এলাকার ফাহমিদা আখতার বলেন, ‘কদিন আগেও এই অবস্থা ছিল না। এখন তো বাচ্চাদের নিয়ে চরম কষ্টে আছি। ওরা ঠিকভাবে না ঘুমাতে পারছে, না লেখাপড়া করতে পারছে। রাত নেই দিন নেই বিদ্যুতের যাওয়া আসা লেগেই আছে।’
লোডশেডিং নিয়ে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে এই লোডশেডিং। এখানকার ছোটখাটো যে কয়টা শিল্প কারখানা আছে সেগুলো বিদ্যুৎ নির্ভর। তা ছাড়া সব ব্যবসাতেই লোডশেডিংয়ের খারাপ প্রভাব ফেলছে।’
চেম্বার সভাপতি আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের এত ভালো উৎপাদনের সময় এমন পরিস্থিতি কেন- এটা নিয়ে সন্দেহ হয়। সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পরিকল্পিতভাবে কেউ ষড়যন্ত্র করছে কি না সন্দেহ হচ্ছে। আমার মনে হয়, এটি তদন্ত করে দেখা উচিত।’
রাজশাহীতে বিদ্যুত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় লোডশেডিং করে বিদ্যুতের সমন্বয় করা হচ্ছে।
নেসকো সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগে বিদ্যুতের যে চাহিদা- কোনো কোনো সময় তার চারভাগের তিনভাগ সরবরাহ মিলছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
নেসকো রাজশাহী অঞ্চলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সমস্যাটা কী- তা আমরাও জানি না।’
পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রোববার দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪০৫ মেগাওয়াট আর সরবরাহ পেয়েছি ৩০৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করতে হয়েছে ১০২ মেগাওয়াট। রাত ৯টায় চাহিদা ছিল ৪৪১ মেগাওয়াট আর সরবরাহ পেয়েছি ৩৫০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ৯১ মেগাওয়াট। সোমবার দুপুর ১২টায় চাহিদা ছিল ৪৬৫ মেগাওয়াট, সরবরাহ পেয়েছি ৩৪৬ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ১১৯ মেগাওয়াট। সরবরাহ কম হওয়ায় ম্যানেজ করা হচ্ছে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমেই।’
বিদ্যুৎ সংকট কবে নাগাদ কাটতে পারে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি নেসকোর এই প্রধান প্রকৌশলী।