জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দাতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতির ১০০ বিলিয়ন ডলারের এক পয়সাও এখন পর্যন্ত পায়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
সোমবার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ‘বাংলাদেশের ৫০: সাফল্য ও সম্ভাবনা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে আমরাও এ নিয়ে কথা বলেছি। জি-২০ দেশগুলো তারাই সবচেয়ে বেশি পরিবেশন দূষিত করে থাকেন। এসব দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না। জলবায়ুর প্রভাবের ফলে বিশ্বজুড়ে মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।
‘বাংলাদেশের ৫০: সাফল্য ও সম্ভাবনা’ বইয়ের লেখক হিসেবে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক বড় বড় অর্জন রয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে আমাদের বড় ইভেন্ট হয়েছে। বাংলাদেশের ৫০ বছর ও মুজিব শতবর্ষ আমরা পালন করেছি। এগুলো নিবন্ধন আকারে যখন পত্রিকায় লিখেছি, তখন সেগুলো সংরক্ষণে বই আকারে সন্নিবেশিত করেছি।
‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাফল্য ও তার ধারাবাহিকতা নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্ব নেতারা যে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক সাফল্য ও জলবায়ু পরিবর্তনে যে শক্তিশালী ভূমিকা সেটি নিয়েও তারা বিস্মিত হয়েছেন। আমি এগুলোকে স্থান দেয়ার চেষ্টা করেছি।’
আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের অর্থনীতিকে যেভাবে রেখে গিয়েছিলেন, আজ তার অবর্তমানে সেই ধারাবাহিকতার সাফল্য উল্লেখ করার মতো।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের ভিশন বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সফলভাবেই সম্পন্ন করা গেছে। বঙ্গবন্ধুর দর্শন বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা যাদের দাতা বলি, তারা কেউ কিন্তু আমাদের এমনি এমনি লোন দেয় না। লোন দেয়ার মধ্য দিয়ে তারা লাভবান হবে না।
‘করোনা ম্যানেজমেন্টে আমরা সারা বিশ্বে পাঁচ নম্বর এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এক নম্বর। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই কেবল সেটি সম্ভব হয়েছে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে লোন দেয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংক সরে গেল, কিন্তু সেতু করতে এর থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল টেকনিক্যাল ও টেকনোলজির বিষয়গুলো। বিশ্বব্যাংক একটা শিক্ষা পেয়েছে।’
বইটিতে বাংলাদেশের সব বিষয় লেখক স্থান দিয়েছেন, এ জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
পাবলিক সার্ভিস কমিশশের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘৫০ বছরে এসে বাংলাদেশের অর্জনগুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে। আগামী তারুণ্যর জন্য বইটি অনুপ্রেরণা।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বইতে তার আন্তর্জাতিক ভাবনা ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও লিখেছেন। সরকারের দায়িত্বশীল হয়েও তিনি যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন এটার জন্য বেশ সাহসের। কারণ এত ব্যক্তি চিন্তার প্রতিফলন ও মতামত ঘটে।’
ভিশন ২০৪১ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশের এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তন আমাদের অনুধাবন করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বড় অর্জন। আমরা আমাদের সাফল্যকে স্বীকার করাসহ আত্মবিশ্বাসের জায়গায় আরও বেশি নজর দিতে হবে।’
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালসহ অন্যরা।
‘বাংলাদেশের ৫০: সাফল্য ও সম্ভাবনা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের শুরুতেই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
এরপর আলোচক-অতিথি বক্তাদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। মূল আলোচনা পর্ব শুরুর আগে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন আলোচকরা।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ঝুমঝুমি’-এর প্রতিনিধিরা।