নড়াইলের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহারের পর এবার মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ মোরছালিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের এক আদেশে রোববার বিকেলে তাকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করে নড়াইল সদর থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শেখ মোরছালিনকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে নড়াইল জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছেন।’
এর আগে রোববার সকালে ওসি মো. শওকত কবিরকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে খুলনা রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) সংযুক্ত করা হয়।
গ্রেপ্তার বেড়ে ৫
সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানো ও সংহিসতার ঘটনায় পুলিশ আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই নিয়ে মামলায় মোট গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫ জন।
ওসি মো. মাহমুদুর রহমান জানান, অধ্যক্ষ লাঞ্ছিতের ঘটনায় অভিযুক্ত মো. নুরুন্নবীকে যশোরের মনিহার সিনেমা হলের পাশ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অভিযুক্ত মো. নুরুন্নবীকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নড়াইল জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে মধ্য রাতে তাকে যশোর থেকে নড়াইলে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১৮ জুন মির্জাপুর কলেজের ওই ঘটনার একেবারে শেষ দিকে মো. নুরুন্নবী গিয়ে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলেন। সেই অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে।
গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।
শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্থ হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সারা দেশে।
ঘটনার ৯ দিন পর গত ২৭ জুন দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন।
দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় আগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন, রহমতুল্লাহ বিশ্বাস রনি, মোবাইল ফোনের মেকানিক শাওন, অটোরিকশার চালক রিমন এবং মাদরাসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ।
ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারদের প্রত্যেককে ৩ দিন করে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। ওই চারজন বর্তমানে সদর থানায় রিমান্ডে আছেন। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিকেও রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হবে।’