যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-২-এর একটি দল রাজধানীর কলাবাগানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।
কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার দুপুরে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তার কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলী ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড পান।
২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর রজব আলীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়।
২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৮ মে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আদালতে অভিযোগ গঠনের পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রজবের বিরুদ্ধে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। এ সময় সে গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করতে থাকে।
‘আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত। ধারাবাহিক নজরদারির ফলে তাকে গ্রেপ্তার করা গেছে।’
আল বদর বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন রজব আলী
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার রজব আলী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশের নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতনসহ মনবতাবিরোধী অপরাধ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রজব ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় পাকিস্তানি ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জের লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চন্ডিপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট ও নির্যাতন চালান। এ ছাড়া, নিরীহ অনেককে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেন।
র্যাব জানায়, রজব আলী ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনট মামলা হয়। এসব মামলায় তার ৪০ বছর সাজা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় ১৯৮১ সালে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান রজব।
১৯৮২ সালে জেল থেকে বের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ও বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তান যাতায়াত করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে সে নিজ এলাকা ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন রজব আলী। এরপর ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ঘঠন করা হলে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
স্বাধীনতাবিরোধী দুই বইয়ের লেখক রজব
র্যাব বলছে, রজব আলী যে শুধু স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করেছেন তা-ই নয়, তিনি দেশ স্বাধীনের পরও স্বাধীনতাবিরোধী দুটি বই লিখেছেন। বই দুটি হলো ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’। বই দুটিতে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আত্মস্বীকৃতি হিসেবে নিজেকে ‘আলবদর কমান্ডার’ দাবি করেন।
২০১৪ সালে তার ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার এবং তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা হয়।