সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের বেশিরভাগই জেলে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা এই পেশাটিকে আকড়ে ধরে আছেন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, বৈরি আবহাওয়া ও তীব্র মাছ সংকট এসব জেলের জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল এবং উপকূলীয় নদীতে বর্তমানে মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে শত শত জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞ মতে, মাত্রাতিরিক্ত প্লাস্টিক বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে মাছের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে দাদনের টাকা নিয়ে বিপাকে পড়ছেন। আবার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। কেউ আবার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নতুন পেশা খুঁজছেন।
তেমনই এক জেলে শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় পাতাখালি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর গফুর। তিনি বলেন, ‘বাপ দাদার পেশাকে আঁকড়ে রেখেছি দীর্ঘ ৫০ বছর। সুদীর্ঘকাল সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল ও নদীতে পার করলেও জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
‘শুরুর দিকে সময়টা ভালো কাটলেও বর্তমানে হতাশ হয়ে পড়েছি। খাল বিলে মাছ নেই। আর যেটুকু মাছ ধরছি তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে এই পেশা ত্যাগ করার চিন্তা করছি।’
গফুরের মতো এমন শত শত জেলে বর্তমানে জীবন জীবিকার সন্ধিক্ষণে এসে আশা-নিরাশার দোলাচলে ভাসছেন। প্রকৃতির কাছে বারবার বিপর্যস্ত হয়ে সমুদ্র থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
পাতাখালি গ্রামেরই শতবর্ষী মোহাম্মাদ আলী জানান, আগে সুন্দরবন অঞ্চলের খাল-বিলে প্রচুর মাছ ছিল। কিন্তু এখন মাঝের বংশবিস্তার কমে গেছে। আবার অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমানের মতে, মানবসৃষ্ট নানা কারণেই সাগরে মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব নদী, খাল ও সুন্দরবন সংলগ্ন জলাধারে পড়ছে। মাছের বংশবিস্তার কমে গেছে। এমনকি অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি হয়ে গেছে। আর কিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
মফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এমনটি হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিতে নজর দিয়েছে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি বিশেষজ্ঞ দল ইতোপূর্বে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে কাজ করেছে।’