ঈদযাত্রার ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিন রোববার কমলাপুর রেলস্টেশনে নারীদের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশ কয়েকজন নারী টিকিট ধীরগতিতে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
এদের অনেকে শনিবার দুপুর ২টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান। তারপরও অনেকে টিকিট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে। রোববার দেয়া হচ্ছে ৭ জুলাইয়ে ট্রেনের টিকিট। রোববার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, একদিন আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পুরুষের মতো নারীরাও। অনেকে শনিবার রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
জয়পুরহাটগামী ট্রেনের টিকিটপ্রত্যাশী এক নারী সকাল ১০টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ারের কাছে অভিযোগ করেন, পুরুষদের কাউন্টারের যেভাবে দ্রুত টিকিট দেয়া হচ্ছে নারীদের কাউন্টার সেভাবে দেয়া হচ্ছে না।
এরপর আরও ১০-১৫ জন নারী একই অভিযোগ নিয়ে আসেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কালকে রাত থেকে এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। টিকিট থাকার পরেও সঠিকভাবে টিকিট দেয়া হচ্ছে না।’
একটির বদলে দুইটি কাউন্টার করার দাবি জানান তারা।
নারীদের মধ্যে আরেকজন নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজার ঈদে নারীদের দুটো লাইন ছিল। কিন্তু এবার একটা লাইন। এখান থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও টিকিট দেয়া হচ্ছে। তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। ৩০ জনকে টিকিট না দিতেই রংপুর ও লালমনিরহাটের টিকিট শেষ বলে কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে।’
কমলাপুর রেলস্টেশনে নারীদের একটি অংশ লাইনে দাঁড়িয়ে আর পেছনের অংশটি ঝটলা করে মাটিতেই বসে রয়েছেন। তাদের একজন সোনাবানু। তিনি জানালেন, শনিবার বিকেল ৩টার কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন তিনি। যাবেন পঞ্চগড়। কমলাপুরে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ বোধ করছেন তাই তার ছেলের বউ এখন টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন, তিনি কিছু না পেয়ে মাটিতেই বসে পড়েছেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাও টিকিট পেলে আমাদের শান্তি হবে।’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে শনিবার বিকেল ৫টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন মনিরা খাতুন। যাবেন নাটোর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট হয়েছে এই পর্যন্ত লাইনে দাঁড়াতে। এখন যদি টিকেট পাই তাহলেই এই কষ্ট স্বার্থক হবে।’
ঠাকুরগাঁওয়ে যাবেন ঊর্মি আক্তার। তিনি ও তার স্বামী কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন। তারা দুজন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অনলাইনে চেষ্টা করে টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে কাউন্টারে এসেছি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।’
নারীদের লাইনে দাঁড়ানো মনিরা আক্তার দিনাজপুরে যাবেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার দুপুরে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু এখনও টিকিট পাইনি। এখানে নারীদের লাইনে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কারণ ঈদে বাড়ি যেতে হবে।’
নারীদের অভিযোগ নিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বিপুল সংখ্যক নারী লাইনে দাঁড়িয়েছে। এখানে আমরা দিচ্ছি ৭টা থেকে ৮টা ট্রেনের টিকিট। রোজার ঈদে ১৫টি ট্রেনের টিকিট দেয়া হয়েছিল বলে দুইটি লাইন ছিল। কিন্তু একটি লাইনকে আমরা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। তারপরও যদি অভিযোগ করা হয়, যে নারীদের বিষয়ে ব্যবস্থাপনার অভিযোগ আছে তাহলে সে বিষয়টা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে।’
এবার ঈদে ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনে প্রতিদিন আসন সংখ্যা হবে ২৬ হাজার ৭৩৯টি। এ ছাড়া রোববার থেকে দুটো ঈদ স্পেশালসহ মোট টিকিট সংখ্যা মোট ২৯ হাজার ৭০০। এর মধ্যে কাউন্টারে অর্ধেক টিকিট বিক্রি হবে। বাকি অর্ধেক টিকিট মোবাইল অ্যাপ ও ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি হবে।
গত ২২ জুন রাজধানীর রেল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, এবার ১ জুলাই দেয়া হবে ৫ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। ২ জুলাই ৬ জুলাইয়ের টিকিট, ৩ জুলাই দেয়া হবে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। এ ছাড়া ৪ জুলাই দেয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট এবং ৫ জুলাই দেয়া হবে ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।
ঢাকায় ছয়টি স্টেশনে এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর শহরতলি প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট; তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।