বাংলাদেশের সঙ্গে দৃঢ় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে ইতালির ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
দেশটির রাজধানী রোমে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘প্রথম অর্থনৈতিক কূটনীতি সপ্তাহ' অনুষ্ঠানে তারা এ আগ্রহ দেখায় বলে রোববার রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রসারের জন্য ‘ম্যাপি এনজি এক্সারসাইজ: বাংলাদেশ-ইতালি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ওপরচুনিটিজ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়।
ইতালি, মন্টেনিগ্রো ও সার্বিয়ায় বাংলাদেশের দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান তার স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে ২৫ জুন উদ্বোধন হওয়া সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সংবাদ সবাইকে জানান।
ইতালি ও বাংলাদেশের ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দুই দেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি এই সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গতিশীলতা আনতে আহ্বান জানান।
শামীম আহসান বলেন, 'আমাদের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে এ সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। আমি আশাবাদী যে ইতালির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায়ের সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদ চৌধুরী অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু।
তিনি বক্তব্যে ফুড প্রসেসিং, কৃষি, প্রযুক্তি, ব্লু ইকোনমি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র বের করে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান জিয়ানপাওলো বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র, সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দুই দেশের মধ্যে একটি ‘বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের ওপর গুরুত্ব দেন।
দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ইতালির বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে জানান।
টেক্সটাইল, চামড়াশিল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি এবং ফুড প্রসেসিং, ফুড রিটেইলিং এবং বেকারি, আইসিটি, সিরামিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট এবং পাটজাত পণ্য, সোলার মডিউল, সুনীল অর্থনীতি, রোবোটিকস, স্বাস্থ্যসেবা খাতের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতকে দুই দেশের সহযোগিতার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের মহাপরিচালক, ইপিবির মহাপরিচালক, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বেসিস, এলএফএমইএবি, এপেক্স ফুটওয়্যার এর প্রেসিডেন্ট এবং ওয়াল্টন, ই-ক্যাব-এর প্রতিনিধিরা এবং ইতালির পক্ষে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইতালির দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার, ইটা, কনফিন্ডাস্ট্রিয়া, এআইসিই, রিফলাইন, এনি, মাগালদি পাওয়ার, ডিএম ইটালিয়ার প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।
নেপোলি ও ফ্লোরেন্স-এ বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
দুই দেশের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা আলোচনায় তুলে ধরেন, যা একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। ইতালির পক্ষে এনি, লিওনার্দো, মাগালধি পাওয়ার, রিফলাইন, ব্রাচি, ইডিওজি, ডিএম ইটালিয়া এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ, এপেক্স, ওয়ালটন এর প্রতিনিধিরা তাদের আশাবাদ এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
হাইব্রিড ফরমেটে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সবাই একমত হন, এটি দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
ইতালি-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইতালি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।