ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিন রোববারও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে।
টিকিটপ্রত্যাশীদের অনেকে আগের দিন এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলছেন, অনলাইনে টিকিট না পাওয়ায় স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছেন লাইনে।
আগের দুই দিনের মতো রোববারও সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। আজ দেয়া হচ্ছে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।
সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় টিকিটপ্রত্যাশী কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন মনির মিয়া। যাবেন লালমনিরহাটে।
কমলাপুরে এসেও অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন মনির৷ তিনি এসেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে।
মনির বলেন, ‘অনলাইনে বহু চেষ্টা করেও আসলে প্রবেশ করতে পারছি না। আর লাইনে দাঁড়িয়েছি অনেক পেছনে। তাই টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না।’
সিরাজগঞ্জের জামতৈল যাবেন খালিদ হাসান। এ জন্য তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে শনিবার দুপুর ২টায় কমলাপুরে আসেন। ১৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পেয়েছেন টিকিট।
খালিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজার ঈদের সময় বহু চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকিট পাইনি। তাই এবার অনলাইনে চেষ্টাই করিনি।’
টিকিটের লাইনে বিশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে সকালের দিকে কিছু মানুষ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছিল। তখনও রেল পুলিশ আসেনি, তবে তারা শেষ পর্যন্ত সফল না হয়ে চলে গেছে।’
বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাকলাইন মোসতাকিন যাবেন বগুড়ার সান্তাহারে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।
নিউজবাংলাকে সাকলাইন বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্যই কাউন্টারে এসে শনিবার লাইনে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, “অনলাইনে সকাল হলেই সার্ভার ডাউন দেখায়। সেখানে ‘ইউ আর ভ্যালুয়েবল ফর আজ’ (আমাদের কাছে আপনি গুরুত্বপূর্ণ) ছাড়া আর কিছুই দেখায় না। এ জন্যই কাউন্টারে আসা।”
বিমানবন্দর এলাকা থেকে শনিবার বিকেল ৪টায় কমলাপুরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মনিরুল ইসলাম। যাবেন সিরাজগঞ্জে। লাইনের প্রথম ভাগে থাকায় বেশ স্বস্তি বোধ করছেন তিনি।
ধানমন্ডির নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ যাবেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে৷ তিনি বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে অনলাইনে চেষ্টা করেও টিকিট পাইনি। এ জন্য রোববার ভোর ৫টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছি। এখানে এসেও অনলাইনে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সার্ভারে ঢুকতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি অনলাইনে টিকিট পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের এত ভোগান্তি সহ্য করতে হতো না। অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার কারণেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে।’
অনলাইনে টিকিট কাটার ভোগান্তি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং পার্টনার সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভির জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ফারহাত হোসেন রোববার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক মানুষ একসঙ্গে টিকিটের জন্য সার্ভারে প্রবেশ করায় এটা হচ্ছে, কিন্তু সার্ভারের কোনো সমস্যা নেই। সার্ভার ঠিক আছে।’
তিনি জানান, রোববার সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ঢাকায় অনলাইনে ১০ হাজার ৫৭৯টি টিকিট বিক্রি হয়। আর কাউন্টারে বিক্রি হয় ৪ হাজার ৭১১টি টিকিট।
এবার ঈদে ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনে প্রতিদিন আসন সংখ্যা ২৬ হাজার ৭১৩টি। এর মধ্যে কাউন্টারে অর্ধেক টিকিট বিক্রি হবে। বাকি অর্ধেক টিকিট মোবাইল অ্যাপ ও ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি হবে।
গত ২২ জুন রাজধানীর রেল ভবনে সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, এবার ১ জুলাই দেয়া হবে ৫ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। ২ জুলাই ৬ জুলাইয়ের টিকিট, ৩ জুলাই দেয়া হবে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। এ ছাড়া ৪ জুলাই দেয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। ৫ জুলাই মিলবে ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।
ঢাকায় ছয়টি স্টেশন এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। কমলাপুরে মিলছে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর শহরতলী প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাচ্ছে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।