যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাউয়াবাধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবন। অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে শনিবার বিকেলে ভবনটি বিকট শব্দে নদীতে ধসে যায়।
নিউজবাংলার হাতে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, যমুনা নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙছে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের অংশ। সে সঙ্গে খণ্ড খণ্ড জমি গিলে নিচ্ছে যমুনার স্রোত। একপর্যায়ে তীব্র স্রোতে বিদ্যালয়ের পুরো ভবনটিই নদীতে ভেঙে পড়ে।
দুঃখ প্রকাশ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুম মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি যমুনার গর্ভে চলে যায়। ১৫ দিন আগেও ভাঙন এলাকা থেকে ১৫০ মিটার দূরত্বে ছিল ভবনটির অবস্থান।
‘২৬ জুন নিলামে ভবনটি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ভবনটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টাও করেন শ্রমিকরা। তার আগেই তীব্র স্রোতে নদীগর্ভে চলে যায় পুরো ভবন। ভবনটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
প্রধান শিক্ষক জানান, যমুনায় পানি কিছুটা কমে আসায় অব্যাহত ভাঙনের মুখে পড়ে ভবনটি। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ভবনটির পুরো অংশই নদীতে দেবে যায়।
কাউয়াবাধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালে। ২০০৯ সালে দ্বিতল ভবনটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। এই ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলে আসছিল।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে বিদ্যালয়ের ভবনটি দেখতে গিয়ে ছবি ও ভিডিও করি। সেখান থেকে ফেরার পরপরই ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর পাই। বিদ্যালয়ের ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশই এখন নদীর বুকে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঠদানের কোনো ভবন নেই। তবে পাশেই নিজের আরেকটি জমিতে বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করতে চাই।
‘টিনশেড কিংবা অবকাঠামো নির্মাণে হাতে কোনো অর্থ নেই আমাদের। সরকারি সহযোগিতা না পেলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের ভবনটি নিলামে কিনেছিলেন ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘আড়াই লাখ টাকায় কেনার পর ভবনটি ভেঙে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছিল। কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা ভবনের কিছু ইট ও রড সরিয়ে নিলেও শুক্রবার সন্ধ্যার আগে তীব্র স্রোতে ভবনটি ভেঙে পড়ে নদীতে। নিলাম বিজ্ঞপ্তির অল্প সময় অর্থাৎ ৪-৫ দিনে ভবনটি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভবনটি রক্ষায় অন্তত ১৫ দিন আগে কর্তৃপক্ষের নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়া উচিত ছিল।
তিনি জানান, এখন নিলামে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধে তাকে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এ জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক রফিকুল ইসলাম জানান, গত ১৫ দিন আগেও বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় দেড় শ মিটার। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিদ্যালয়টি যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
যমুনার ভাঙনে কাউয়াবাধাসহ দক্ষিণে চৌমোহন, পশ্চিমে কোচখালী, মানিকচর ও গুপ্তমনি গ্রামের রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। অথচ ভাঙন রোধে জিও ব্যাগে বালুর বস্তা ফেলেই দায় সারে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা একাধিকবার পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি ভাঙনে প্রতিবছর নিঃস্ব মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও তাদের খোঁজ রাখেনি কেউ।
যমুনার ভাঙন আতঙ্কে তীরবর্তী হাজারো মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে বলে জানান ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। কিন্তু ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এবারও ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ওপরই ভরসা করে আছি। জনগণের জানমাল রক্ষায় দ্রুত পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’