সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের একটি গ্রামে মাত্র ২২ দিনের মধ্যে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ১১ দিন পর পর ওই তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন মৃত্যুতে ওই গ্রামজুড়ে এখন শোক আর আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিশাহারা অবস্থা পরিবারটিরও।
ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা সেনপাড়া এলাকার। মৃত ৩ জন হলেন ওই এলাকার কৃষ্ণ চন্দ্রের ১৬ বছরের ছেলে মিঠুন চন্দ্র রায়, কৃষ্ণ চন্দ্রের কাকাতো ভাই ও মৃত অন্যপ্রসাদ রায়ের বড় ছেলে ৩০ বছরের বিমল চন্দ্র রায় ও মেজো ছেলে ২৭ বছরের রতন চন্দ্র রায়।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ জুন অসুস্থ অবস্থায় মারা যায় মিঠুন। তার শ্রাধ্যের দিনক্ষণ ছিল ২০ জুন। কিন্তু ১৯ জুন রাতেই মারা যান রতন। তিনি অসুস্থতা বোধ করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। রতনের শ্রাধ্যের দিনক্ষণ ছিল ১ জুলাই। কিন্তু তার আগের দিন ৩০ জুন রাতে আকস্মিকভাবে মারা যান বিমল। ফলে ছোট ভাইয়ের শ্রাদ্ধ না করেই সৎকার করা হয় বড় ভাইকে।
এদিকে একে একে তিন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারটিতে। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বিমলের নববধূ অষ্টমনি রানী। দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বিলাপ করছেন রতনের স্ত্রী চিত্রা রানী।
মাত্র ৮ মাস আগে স্বামীকে হারানোর পর এবার কয়েক দিনের ব্যবধানে দুই ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা জয়ন্তি রানীও। এ ছাড়া স্থানীয়দের মাঝেও শোকের পাশাপাশি বিরাজ করছে আতঙ্ক।
মিঠুনের বাবা কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, তার ছেলে স্থানীয় স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার। পড়ালেখা করে ছেলে অভাবের সংসারে হাল ধরবে- এমন প্রত্যাশা ছিল বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বিমল ও রতনের ছোট ভাই জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেছেন এখনও এক বছর হয়নি। এর মধ্যেই দুই ভাইকে হারাতে হলো। আমরা অভিভাবক শূন্য হয়ে গেলাম। কিভাবে পরিবার চালাব ভেবে পাচ্ছি না। আর কাউকে হারাতে চাই না।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘এক পরিবারে একে একে তিনজনের মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা। শুনেছিলাম রতনের কিডনিকে সমস্যা ছিল। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় সঠিক চিকিৎসা করতে পারেনি হয়তো।’
পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাও চান বেলাল।
বিষয়টি নিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, ‘খবর নিয়ে জেনেছি, যারা মারা গেছেন তারা রোগাক্রান্ত ছিলেন। পরিবারটি যদি মনে করে তাদের কোনো বংশানুক্রমিক রোগ রয়েছে, তাহলে প্রয়োজনে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ ছাড়া ওই পরিবারটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়ারও আশ্বাস দেন ইউএনও।