‘জন্মের আগে পশুচিকিৎসক বলেছিলেন ভালো মানের গরু হবে, বাচ্চাটা যেন বাড়িতে পালন করা হয়। ষাড় বাচ্চা পেয়ে বাড়িতে পালনের সিদ্ধান্ত নেন বগুড়া সদরের খামারি যুবক নূর আমিন। বগুড়ার আঞ্চলিকতার সুরে নাম দেন বুদু মিয়া।’‘আড়াই বছরে ষাড় বাচ্চা বুদু মিয়া এখন এক হাজার কেজি ওজনের একটি সুবিশাল গরু। হলেস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান দামের গরুটির দাম হাঁকানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে আসন্ন কোরবানি মৌসুমে বগুড়ার চমক হয়ে উঠেছে বুদু মিয়া।’
বলছিলেন সদর উপজেলার এরুলিয়ার বানদীঘি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা নূর আমিন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। বানদীঘি বাজারে তার রড, সিমেন্টের ব্যবসা। তবে ব্যবসার পাশাপাশি শখের বশেই গরু পালন করেন নূর আমিন।নূর আমিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে গরু রয়েছে। আমিও পড়ালেখার পাশাপাশি গরু পালন করে আসছি। আড়াই বছর আগে মন্টু নামে স্থানীয় এক পশুচিকিৎসক ব্র্যাক থেকে উন্নত জাতের বীজ এনে দেন আমাকে।’
‘তখনই ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, খুব ভালো বীজ। এক সময় এই বীজের জন্য আমার নাম করবা। এই বাচ্চা বাড়িতে রেখে দিও। বাচ্চাটাও হয়েছিল অনেক বড়। তার কথাতেই বাচ্চাটি বাড়িতে পালনের সিদ্ধান্ত নিই।
এ কারণেই তার নাম দেয়া বলে জানান নূর আমিন। তিনি বলেন, বগুড়া জেলার সাথে মিল রেখে নাম রেখেছি বুদু মিয়া। ও খুবই শান্ত স্বভাবের। বাড়ির কাউকে কিছু বলে না।’‘বুদু মিয়া লম্বায় প্রায় আট থেকে নয় ফিট। দৈনিক দানাদার, খড় ও কাঁচা ঘাস মিলে অন্তত ২৫ কেজি খাবার খায় গরুটি। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার গোসল করাতে হয় তাকে। আর সপ্তাহে দুদিন বাইরে হাঁটাহাঁটি করানো হয়।’খামারি আমিন জানান, বুদু মিয়াকে কখনও ইনজেকশন বা ফিড খাওয়ানো হয়নি। জন্মের পর থেকে ছয় মাস শুধু মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। এখন দিনে ১২ থেকে ১৩ কেজির দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। আর ১৫ কেজি কাঁচা ঘাস দিতে হয়।
তিনি আরও জানান, ১৫ দিন আগে প্রচলিত নিয়মে ফিতার মাপ থেকে ওর ওজন পাওয়া গেছে প্রায় এক হাজার কেজি। এই কয়েক দিনে ওজন এক হাজার কেজি পাড় হয়ে যাওয়ার কথা।বুদু মিয়াকে লালনপালনে খরচের বিষয়ে নূর আমিন বলেন, এই বার প্রথম কোরবানির বাজার লক্ষ্য রেখে গরু বিক্রি করছেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে পশু খাদ্যের দাম খুব বেশি। বুদু মিয়াকে ছয় মাস পর থেকে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার খাবার খাওয়াতে হয়েছে। এ হিসাবে দুই বছরে অনেক টাকা তার পিছনে ব্যয় হয়।তিনি বলেন, ‘এসব হিসাব করে বুদু মিয়ার মূল্য ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা। প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। কিন্ত পশুখাদ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে কম দামে বেচলে আমাদের মতো প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’শেখ নামে আমিনের প্রতিবেশী রনি বলেন, ‘আমিনের গরু পালনের কথা এলাকার সবাই জানে। কিন্তু তার বাড়ির মতো এত বড় গরু এ এলাকায় আগে কখনও দেখা যায়নি।’নূর আমিন বলেন, ‘কোনো হাটে বুদু মিয়াকে ওঠানোর ইচ্ছা নেই। এর মধ্যে গত ১৫ দিন আগে থেকে বেশ কয়েকজন দরদাম করেছে। এভাবে বাড়ি থেকে বিক্রি হলে ভালো। তা না হলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঈদের দুদিন আগে ঢাকার গাবতলীতে নিয়ে যাবো। তবে বগুড়ায় বিক্রি হলে প্রয়োজনে ঈদ পর্যন্ত গরুকে বাড়িতে রাখার সুযোগ দিবো।’জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, এ বছর আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৬ হাজার ১৫ জন খামারি মোট ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এ বছর জেলায় কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ৬৭ হাজার ৯২০টি।