কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি পাওয়া গেছে। ৩ মাস ২০ দিনে এই পরিমাণ টাকা জমা পড়ল সেখানে। এ ছাড়া জমা পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মোস্তফা নিউজবাংলাকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় গণনা শুরু হয়, চলে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। দিনভর গণনা শেষে ১৬টি বস্তায় পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা।
এর আগে সর্বশেষ গত ১২ মার্চ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৪ মাস ৬ দিনে এই দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছিল ১৫ বস্তা টাকা। সেই বস্তাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে দিনভর গণনা শেষে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা। এ ছাড়া জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ নানা ধরনের জিনিস দান করেন বিভিন্ন জেলার অসংখ্য মানুষ।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল ৯টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়। বাক্সগুলো থেকে টাকাগুলো প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। তারপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বস্তা থেকে টাকাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মেঝেতে ঢেলে শুরু হয় গণনা। এতে অংশ নেন মাদ্রাসার ১১২ ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ ও মসজিদ কমিটির ৩৪ জন।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূইয়া নিউজবাংলাকে জানান, মসজিদে দানবাক্স রয়েছে আটটি। সেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ সহায়তা দিয়ে থাকেন। করোনা সংক্রমণের শুরুতে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল এবং নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকলেও দান অব্যাহত ছিল।
পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের হাফিজিয়া মাদ্রাসার খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেয়া হয়। অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্তদের সহায়তাও করা হয়।
তা ছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরও এই দানের টাকা থেকে সহায়তা করা হয়েছে।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করছেন এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে।
দানবাক্স খোলার পর থেকেই গণনা দেখতে মসজিদের আশপাশে ভিড় জমান উৎসুক মানুষ। গণনা দেখতে এসেছেন মো. এনামুল হক হৃদয়। তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে হৃদয় বলেন, ‘মানুষের মুখে আর বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়া টাকার কথা শুনি। এবার নিজ চোখে দেখতে এসেছি। সত্যিই এত পরিমাণ টাকা একসঙ্গে কখনও দেখিনি। তা ছাড়া আমার জানামতে, কোনো মসজিদের দানবাক্সে এত পরিমাণ টাকা জমা পড়ে এমন খবরও শুনিনি।’
গণনার কাজে নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্য রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার দেশের বাড়ি নরসিংদী। পাগলা মসজিদের দানের টাকা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছি। কিন্তু এবার সৌভাগ্যক্রমে এই মসজিদে ডিউটি পড়েছে। গণনা দেখে খুব ভালো লাগছে। দানবাক্সে জমা পড়া অনেক টাকার ছবি তুলেছি। বাড়িতেও পাঠিয়েছি।
গণনায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন মেহেদি নিউজবাংলাকে জানায়, দানবাক্স খোলার পর থেকে গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী সেখানে থাকে।
মো. ইয়াসীন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী মসজিদের দানবাক্স কখন খোলা হবে অধীর আগ্রহ নিয়ে সেই অপেক্ষায় থাকে। একসঙ্গে এত টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণালংকার দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগে। সবচেয়ে আনন্দ লাগে সবাই মিলে একসঙ্গে টাকা গুনতে।
পাগলা মসজিদের নৈশপ্রহরী মো. মকবুল হোসেন। তিনি এই মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন ২৭ বছর। তিনি বলেন, ‘শুধু মুসলিম না, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে এসে দান করেন। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলও দান করেন অনেকে। করোনার শুরুতে যখন জনসমাগম বন্ধ ছিল, তখনও অনেকে গভীর রাতে এসে দানবাক্সে দান করেছেন।’
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. গোলাম মোস্তফার তত্ত্বাবধানে সকাল ৯টায় দানবাক্সগুলো খোলা হয়।
এছাড়া কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ শামীম আলম, পৌর মেয়র ও মসজিদ কমিটির সদস্য সচিব মো.পারভেজ মিয়া, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উবায়দুর রহমান সাহেল, মাহবুব হাসান, সিরাজুল ইসলাম, সুশান্ত সিংহ, নাবিলা ফেরদৌস, ফাতেমা তুজ জোহরা, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে অবস্থিত পাগলা মসজিদ।