বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষক হেনস্তা ও হত্যা: জেলায় জেলায় প্রতিবাদ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২ জুলাই, ২০২২ ১৮:৩১

নড়াইলে পুলিশের সামনে শিক্ষককে হেনস্তা ও সাভারে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন মানুষ। জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়। শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় সরব হন কয়েকজন সংসদ সদস্যও।

নড়াইলে পুলিশের সামনে শিক্ষককে হেনস্তা ও সাভারে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

‘ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে এক হিন্দু শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন’- এমন অভিযোগ এনে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে পুলিশের সামনেই এক শিক্ষককে অপদস্ত করার ঘটনা ঘটে।

গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। কলেজে গত ১৮ জুন এ নিয়ে দিনভর চলে উত্তেজনা।

এরপর পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।

এরই মধ্যে গত শনিবার ঢাকার সাভারে কলেজে এক শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে তারই এক শিক্ষার্থী। পরদিন রোববার সাভারের একটি হাসপাতালে মারা যান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার।

অভিযুক্ত দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব জানায়, একই স্কুলের এক ছাত্রীর সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরায় বিরত থাকতে বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে এবং ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম দেখাতে শিক্ষক উৎপলের ওপর হামলা চালান তিনি।

এসব ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন মানুষ। জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়। শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনায় সরব হন কয়েকজন সংসদ সদস্যও।

তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে শনিবার পিরোজপুর, দিনাজপুর এবং নীলফামারীতেও বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

পিরোজপুরে সকালে জেলা ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে শহরের কৃষ্ণচূড়া মোড়ে প্রথমে মানববন্ধন ও পরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ কর্মসূচিতে সংহতি জানায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, কমিউনিস্ট পার্টি, সাংবাদিক সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য দিলিপ কুমার বলেন, ‘সাভারে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার নিজের ছাত্র। পুলিশের উপস্থিতিতে নিজের প্রতিষ্ঠানেই গলায় জুতার মালা পরানো হলো নড়াইলের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পাহারায় যখন শিক্ষককে হেনস্তা করার মতো ঘটনা ঘটে, তখন আমরা এই রাষ্ট্রে কতটা নিরাপদ, সেই প্রশ্ন করতে চাই।

‘নড়াইলে শিক্ষক হেনস্তা, সাভারে শিক্ষক হত্যাকাণ্ডসহ সারা দেশে শিক্ষক নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাই।’

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমন চৌধুরী বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য যে দেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীন করা হয়েছিল, সে দেশকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার। বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে, যা উৎখাত করার সময় এখনই।

‘এ জন্য দেশের শিক্ষার্থী ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে কেউ যেন ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।’

শিক্ষক হত্যা ও হেনস্তাকারীদের বিচার চেয়ে দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সামনে একই দিন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন পালন করা হয়।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আহসানুল হক মুকুল বলেন, ‘শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির মেরুদণ্ড। অথচ এই মেরুদণ্ডকে হত্যা করা হচ্ছে, নানাভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।

‘সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা ও নড়াইলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করার মতো কোনো ভাষা আমাদের কাছে নেই। আমরা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এর আগে সেখানে মানববন্ধন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনের দিনাজপুরের সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দিন বাচ্চুর সভাপতিত্বে জেলা উদীচীর সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুল ইসলাম বাবুল, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

একই দাবিতে শনিবার নীলফামারী জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে মানববন্ধন করেছেন জেলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুধির কুমার রায়ের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সারওয়ার মানিক, উত্তম কুমার রায়, হায়দার আলী, আশরাফুজ্জামান জুয়েল, শিক্ষার্থী সানজিদা আকতার প্রমুখ।

অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সাভারে কলেজের প্রভাষককে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, আর নড়াইলে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সামনে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করা হয়। এটা হতে পারে না এবং মেনে নেয়ার মতো ঘটনা নয়।’

শিক্ষার্থী সানজিদা আকতার বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

‘আমি মনে করি, এই ঘটনায় দেশের পুরো শিক্ষক সমাজই নয়, হেয় করা হয়েছে শিক্ষার্থীদেরও। আমরা কর্মসূচি থেকে দুই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।’

মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

এসব ঘটনার বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন ভোলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও। শনিবার সকালে ভোলা প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

বক্তব্যে শান্তিরহাট ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করেছেন। আজ শিক্ষকদের হত্যা ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এ দেশে বিভিন্ন সময় শিক্ষকদের ওপর হামলা হয়, কিন্তু সঠিক বিচার হয় না। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকবান্ধব, সে দেশে শিক্ষকদের এমন হত্যা-নির্যাতন মেনে নেয়া যায় না।

‘নড়াইলের শিক্ষককে যখন জুতার মালা পরানো হয়েছে, এটা শুধু একজন শিক্ষককে পরানো হয়নি; সারা দেশের শিক্ষক সমাজকে জুতার মালা পরানো হয়েছে। প্রভাষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার মাধ্যমে দেশের সব শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে।’

এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

শিক্ষক হত্যা ও হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে সাতক্ষীরায়ও।

এ বিভাগের আরো খবর