নাটোর সদরের পানমোকাম গ্রামে কারো অসুস্থ হওয়ার খবর পেলেই হাজির হন রাবেয়া বেগম। গভীর রাতে গানের তালে নামান ‘ভূত’। সেই ভূত বোতলে ভরে নিয়ে যান। এই কাজের জন্য নেন এক থেকে দুই হাজার টাকা।
কয়েকদিন আগে শহরতলীর দত্তপাড়ায় এক কিশোরীর মানসিক সমস্যার কথা জানতে পেরে সেখানে যান রাবেয়া। সেই কিশোরীকে ভূত ধরেছে জানিয়ে শুরু করেন ভূত নামানো।
কখনও কিশোরীটিকে নানা ধরনের শিকড়বাকড় শোকান, কখনও নাকের সামনে ধরেন হাড়। এভাবে চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। এরপর বোতলে ‘ভূত ধরা শেষে’ নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক নিয়ে বিদায় নেন।
রাবেয়া নিউজবাংলাকে জানান, কাউকে জিন বা ভূত ধরলে তিনি তা ধরে বোতলে ভরেন। কখনও তাকে ফোন করে ডেকে নেয়া হয়, কখনও নিজে থেকেই যান। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তিনি এই কাজ করেন। গায়েবিভাবে পেয়েছেন এই জিন-ভূত তাড়ানোর ক্ষমতা।
নাটোরে এভাবেই চলছে ওঝা-কবিরাজদের তথাকথিত চিকিৎসা। শুধু প্রত্যন্ত এলাকাতেই নয়, এমন কাজ চলছে শহরের হাটে-বাজারেও।
রাবেয়ার মতো আরেকজন হলেন বশির মিয়া। নলডাঙ্গা উপজেলার সমসখলসি গ্রামের বশির আগুন জ্বালিয়ে তন্ত্রমন্ত্রের মাধ্যমে জিন-ভূত তাড়ানো ও বন্ধ্যাত্ব দূর করে সন্তানপ্রাপ্তির প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
বিষয়টি নজরে আসায় গত ২৯ জুন বিকেলে সদর উপজেলার বনবেলঘড়িয়া থেকে তন্ত্রমন্ত্রের সরঞ্জামসহ বশিরকে আটক করে র্যাব। ভ্রাম্যমাণ আদালতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়ার কথা স্বীকারও করেন তিনি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শওকত মেহেদী সেতু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বশিরকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর বশিরকে নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক ও ভুয়া কার্যকলাপে মানুষের বড় ধরনের শারীরিক আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
স্থানীয় একটি ক্লিনিকের চিকিৎসক পারসিয়া তাবাসসুম দীপ্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে কোনো ধরনের ভুল চিকিৎসায় মানুষের বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতি তো আছেই। অপচিকিৎসা রোধে প্রান্তিক পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভুল চিকিৎসা প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন রোজী আরা খাতুন বলেন, ‘অপচিকিৎসার খবর পেলেই স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। মাঝে মাঝে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়।
‘কেউ অসুস্থ হলে যেন ওঝা বা কবিরাজের কাছে না যায় সেই প্রচারও অব্যাহত আছে।’