শেরপুর পৌর এলাকার কান্দা পাড়ার শিক্ষিত যুবক মো. অলিদ। লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রতি বছরই কোরবানির জন্য ষাড় লালন-পালন করেন তিনি। এতে বেশ লাভবানও হয়েছেন অলিদ।
গত বছর শেরপুরের ‘বস’ নামের একটি ষাড় লালন-পালন করে সবার দৃষ্টি কাড়েন শিক্ষার্থী অলিদ। সাত লাখ টাকা দাম হাকিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখে বিক্রি করেন শেরপুরের বসকে। এতে বেশ লাভবানও হন।
এবারও অলিদ রাজা, বাদশা ও জমিদার নামের তিনটি ষাড় লালন-পালন করে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য তৈরি হচ্ছেন অলিদ।
শেরপুরের বড় কোরবানির হাট নওহাটা পৌর গরুর হাটে বৃহস্পতিবার তিনটি ষাড় তুলে এবারও সবার দৃষ্টি কাড়েন তিনি। এ তিনটি গরুর মধ্যে জমিদার সাড়ে ছয় লাখ, বাদশা সাড়ে পাঁচ লাখ ও কালো রাজার দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হাকাচ্ছেন অলিদ।
খামারি অলিদ বলেন, ‘আমার তিনটি ষাড়ের মধ্যে ক্রেতারা জমিদারের দাম সাড়ে চার লাখ টাকা, বাদশার দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা ও কালো রাজার দাম দুই লাখ আশি হাজার টাকা পর্যন্ত করেছে। আবার অনেকেই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন, কিন্তু সঠিক দাম না পাইলে গরু বিক্রি করা সম্ভব হবে না। কারণ গরুর লালন-পালন করার খরচ অন্য বছরের চেয়ে এবার বেশি হয়েছে।
‘এবার ভুসি, খৈল এগুলোর দামও বেশি। আর আমার ষাড়গুলাকে আমি পুষ্টিকর খাবার দিয়ে বড় করেছি। শেরপুরে এমন অনেক গরু থাকলেও আমারগুলার মত সুস্থ-সবল কম পাওয়া যাবে।’
গরু দেখেতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অলিদ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে ষাড় লালন-পালন করে বলে শুনেছি। গতবারও একটা গরু বাজারে তুলেছিল। ভালো দামে বিক্রি করেছে। এ গরুগুলো দেখে আমাগো খুব ভালো লেগেছে।’
সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘গরু তিনটাকে দেখে অনেক ভালো লাগল। দেখেই মনে হচ্ছে সুস্থ। আমার ইচ্ছে ছিল তিনটার মধ্যে ছোটটা নিমু, কিন্তু দাম করলাম দিল না। পরের বাজারে আবার চেষ্টা করমু নেয়ার জন্য।’
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শেরপুরের কোরবানির হাটগুলো এখনও তেমন জমে ওঠেনি। প্রধান প্রধান হাটগুলোতে কোরবানির গরু আমদানি হচ্ছে কম।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে যে গরু তোলা হচ্ছে, তার দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এ কারণে হতাশ হয়ে গরু না কিনেই বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।
বিক্রেতাদের দাবি, চড়া দামে গোখাদ্য কিনে কোরবানির গরু লালন-পালন করায় খরচ হয়েছে বেশি। এতে কম দামে গরু বিক্রি করা সম্ভব নয়।
বিক্রেতা আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘এবার অনেক কষ্ট করে বেশি দামে গোখাদ্য কিনে গরু লালন-পালন করেছি। আমাগো খরচ হয়েছে অনেক বেশি, তাই সঠিক দাম না পাইলে আমাগো লোকসান অইবো।’
ক্রেতা মো. আলী বলেন, ‘আমি গরুর হাটি আইলাম, তবে ভালো গরু উঠেনি। যাও উঠেছে, দাম অনেক বেশি চাইছে। তাই গরু কিনলাম না।’
এরশাদ আলী বলেন, ‘শেষ দিকে আইসা দাম কমেই গরু বিক্রি করবে খামারিরা। এবার মানুষের হাতে টেহা নাই, কাজেই গরুর দাম কমবেই। তাই আমরা গরু না কিনে চইলা যাইতেছি।’
এদিকে, শেরপুরের গরুর হাটগুলোতে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। তবে রোগাক্রান্ত পশু যাতে কেনাবেচা না হতে পারে, এজন্য ছয়টি টিম গঠন করে বাজারে অবস্থান করছে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।
শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাটে আসে। একই সঙ্গে কোনো অসুস্থ গরু যাতে বাজারে কেনাবেচা না করে, এজন্য মানুষকে সচেতন করছি।
‘আমাদের ছয়টি টিম ঘুরে ঘুরে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে কাজ করছে।’
শেষ মুহূর্তে এসে প্রচুর সংখ্যাক কোরবানির গরু বাজারে উঠবে এবং দামও সহনশীল পর্যায়ে আসবে এমনটাই দাবি কর্মকর্তাদের।