কমলাপুর রেলস্টেশনে প্রায় ১৭ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আব্দুল হাই। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও ঈদযাত্রার অগ্রিম ট্রেনের টিকিট মেলেনি তার। প্রত্যাশিত টিকিট না পেয়ে ফের পরের দিনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
আব্দুল হাই নিজেই রেলওয়েতে চাকরি করেন। বলেন, ‘আমি রেলের ইঞ্জিন বিভাগে ঢাকায় চাকরি করি। দিনাজপুর যাব। প্রায় ১৭ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে। আমার আসলে এসি টিকিট দরকার। কিন্তু শোভন চেয়ারের টিকিট পাওয়ায় টিকিট কিনিনি। আবার ৬ তারিখের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আসলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের ট্রেনের টিকিট পাওয়া খুবই কঠিন। এ জন্যই এ অপেক্ষা।’
প্রথম দিন ঈদযাত্রার অগ্রিম ট্রেনের টিকিট পাননি আব্দুল হাইয়ের মতো অনেকেই। টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ ফিরে গেছেন, অনেকে আবার ৬ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিটের জন্য সিরিয়াল দিচ্ছেন।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করতে থাকেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। তবে কমলাপুরে দুটি জায়গায় টিকিট বিক্রি হওয়ায় ঈদুল ফিতরের তুলনায় এবার টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় কম দেখা গেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, শুক্রবার থেকে মোট পাঁচ দিন কাউন্টারে প্রতিদিন সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। আর মোবাইল অ্যাপ এবং ইন্টারনেটে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে।
টিকিট নেই কাউন্টারে, নেই অনলাইনেও
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে টিকিটের জন্য দাঁড়িয়েছেন কলেজছাত্র রূপক। লালমনিরহাট যাবেন তিনি। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে নিউজবাংলাকে জানালেন, টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমি খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজে পড়ি। লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাইনি। এখন ৬ তারিখের জন্য সিরিয়াল দিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি। সন্ধ্যায় এসে ফের লাইনে দাঁড়াব।’
হতাশা প্রকাশ করে রূপক বলেন, ‘এখানে এসে অনলাইনে ট্রাই করেছি। কিন্তু সেখানেও পাইনি, কাউন্টারেও টিকিট পেলাম না। তাই আবার সিরিয়াল দিয়ে ফিরে যাচ্ছি। আসলে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোতে চাপ বেশি।’
মতিঝিল থেকে এসেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি নাটোর যাবেন। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকিট প্রায় শেষের দিকে, টিকিট পাব কি না তার নিশ্চয়তা নেই।’
বৃহস্পতিবার রাতে এসে লাইনে দাঁড়ালেও টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন আব্দুল মতিন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রংপুর যাব। কালকে লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল দিয়েও টিকিট পাইনি। এখন ফিরে যাচ্ছি।’
এবার ঈদে ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনে প্রতিদিন আসন সংখ্যা হবে ২৬ হাজার ৭১৩টি। এর মধ্যে কাউন্টারে অর্ধেক টিকিট বিক্রি হবে। বাকি অর্ধেক টিকিট মোবাইল অ্যাপ ও ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি হবে।
গত ২২ জুন রাজধানীর রেল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছিলেন, এবার ১ জুলাই দেয়া হবে ৫ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। ২ জুলাই ৬ জুলাইয়ের টিকিট, ৩ জুলাই দেয়া হবে ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট। এ ছাড়া ৪ জুলাই দেয়া হবে ৮ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট এবং ৫ জুলাই দেয়া হবে ৯ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট।
ঢাকায় ছয়টি স্টেশনে এবং গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঈদের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সমগ্র উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট। কমলাপুর শহরতলি প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট; তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট।
টিকিট না পাওয়ার ব্যাপারে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘টিকিট সীমিত। কাউন্টার থেকে আমরা আজকের টিকিট দেব ১৩ হাজার ৭০০-এর মতো। এই টিকিট দেয়া হবে সাতটি কেন্দ্র থেকে অর্থাৎ শুধু কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এই টিকিট দেয়া হবে না। কমলাপুর থেকে শুধু উত্তরবঙ্গের সাতটি ট্রেনের টিকিট দেয়া হচ্ছে । এখানে যে দীর্ঘ লাইন দেখতে পাচ্ছি, সকলে যে টিকিট পাবেন এ নিশ্চয়তা নেই।’
রেল কর্তৃপক্ষ টিকিট কালোবাজারি রোধে সচেষ্ট রয়েছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এবার বাংলাদেশ রেলওয়ের স্লোগান টিকিট যার ভ্রমণ তার। গত রোজার ঈদে আপনারা দেখেছেন, আমরা এটা করেছি। টিকিটে ভ্রমণ নীতি নিশ্চিত হলে অবশ্যই কালোবাজারি রোধ সম্ভব হবে।’
মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘আগামীকাল আরও ভিড় হতে পারে কাউন্টারগুলোতে। টিকিট প্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক বেশি। সবাই টিকিট পাবে না।’
অনলাইনে টিকিট মেলেনি স্টেশন ম্যানেজার মাসুদের
অনলাইনে অনেকে সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছেন না এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার বলেন, ‘সহজ থেকে আমরা যে ব্যাখ্যাটা পেয়েছি তা হলো- সকালে ১৩ হাজার টিকিটের জন্য আজ সাড়ে চার লাখ টিকিট প্রত্যাশী সার্ভারে প্রবেশ করেছে। ১৩ হাজার মানুষই কিন্তু টিকিট পাবে, বাকিরা টিকিট পাবে না। অধিকাংশ লোকই যেহেতু টিকিট পাবে না অভিযোগটা তাদেরই থাকবে। আমি নিজেও সকালে চেষ্টা করে দেখেছি টিকিট কাটতে পারিনি। একসঙ্গে এত লোক টিকিট চাইলে তো আর পাওয়া সম্ভব হয় না।’
কাউন্টারে টিকিট কালোবাজারির সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাউন্টারে টিকেট কালোবাজারির সুযোগ নেই। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য এজেন্সি কাউন্টারের ভেতরে তদারকি করছে। আমাদের ১০ জন অফিসার রয়েছে কাউন্টারের ভেতরে।’