বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পেশায় ঝাড়ুদার, করতেন ব্ল্যাকমেইল

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২২ ২১:০৪

‘নিজাম পেশাদার প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমেই মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। ব্ল্যাকমেইল করাই তার প্রধান পেশা। তার একাধিক বিয়ের খবরও জানা গেছে।’

সবার কাছে ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত নিজাম খাঁ। তবে এটাই তার মূল পেশা নয়। আড়ালে করতেন ব্ল্যাকমেইলিং।

পরিকল্পিতভাবে মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন তিনি।

পটুয়াখালীর দশমিনায় নিজামের প্রতারণার ফাঁদে পড়েন রমেন ঘরামি নামের এক ব্যবসায়ী। পরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

নিহত রমেন দশমিনা উপজেলার কাটাখালী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় প্রসাধনী পণ্য ব্যবসায়ী।

সেই ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা ও সহায়তার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন নিজাম। এরপরই বেরিয়ে আসে তার আসল চরিত্র।

মৃত্যুর আগে ওই ব্যবসায়ীর জবানবন্দির ভিডিও এবং মামলা অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

বুধবার রাতে পটুয়াখালীর কাঠপট্টি এলাকা থেকে নিজামের চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে দশমিনা পুলিশ। এর আগে মূল পরিকল্পনাকারী এবং প্রধান অভিযুক্ত নিজামকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাজেদুল ইসলাম।

গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন, পটুয়াখালী পৌর শহরের কাঠপট্টি এলাকার বেল্লাল হাওলাদার, সাইদ সিকদার ওরফে আধার, শাহেদ ওরফে মোডা শাহেদ ও শাহেদ ওরফে জোকার শাহেদ।

নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (আইন) মশিউর রহমান বলেন, ‘রমেন ঘরামি আত্মহত্যার প্ররোচনা ও সহায়তার অভিযোগে দশমিনা থানার একটি মামলা আমাদের কাছে এলে আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। একপর্যায়ে গত ২৮ জুন সকাল ১০টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকা থেকে প্রধান আসামি নিজামকে গ্রেপ্তার করতে পারি। ওই সময় নিজাম তার স্ত্রীর বাসায় অবস্থান করছিলেন।

‘গ্রেপ্তারের পর নিজাম সবকিছু স্বীকার করেছেন। এ কাজে আরও যারা জড়িত তাদের নামও বলেছে। পরে নিজামকে আমরা পটুয়াখালীর দশমিনা থানায় হস্তান্তর করি।’

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘নিজাম পেশাদার প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমেই মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। ব্ল্যাকমেইল করাই তার প্রধান পেশা। তার একাধিক বিয়ের খবরও জানা গেছে।

‘মূলত টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যই রমেনের সঙ্গে এক নারীর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখায়। পরে রমেনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রথম দিকে রমেন লজ্জায় দুই লাখ টাকা নিজামকে দিলেও পরে গত ১৯ জুন আরও টাকার জন্য যখন চাপ দেয়। তখনই রমেন বিষ খান।’

তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে কাটাখালী সড়কের ওপর পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তা ভিডিও করে। ওই সময় রমেন প্রতারণার কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারান। তাকে প্রথমে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

‘রমেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ধারণকৃত সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।’

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে রমেন বলেছিল, ‘…নিয়া একটা মাইয়ারে দিয়া আমার দুই লক্ষ টাকা নিছে। এহন খালি ফোন দেয়, খালি টাহা দে টাহা দে। আমারে মাইয়াডারে দিয়া জোর কইরা রাস্তায় বইয়া ভিডিও কইরা ছাইড়া দেছে। দহিনদারে বাড়ি দহিনদারে বাড়ি। সেই জন্য আমি বিষ খাইছি।’

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া যে নারীর সঙ্গে রমেনের ভিডিও ধারণ করানো হয়েছিল, সেই নারীকেও খুঁজছি।’

রমেনের মেঝ ভাই সমেন ঘরামি জানান, সম্প্রতি পটুয়াখালী শহরের শেখ রাসেল শিশুপার্কের পাশে বাণিজ্য মেলা চলার সময়ে তার ভাই রমেনকে দশমিনা থেকে ডেকে নিয়ে আসেন নিজাম। পাশাপাশি বাড়ি থাকায় পূর্ব পরিচিত এবং সম্পর্কের কারণেই নিজামের ডাকে সাড়া দিয়ে পটুয়াখালী আসে রমেন।

মেলায় রমেন আসার পর কোনো এক মেয়ের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে ভিডিও করেন নিজাম। সেই ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের দশমিনা উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে তাদের পটুয়াখালী কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।’

তাদের রিমান্ডে আনা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজন হলে অবশ্যই রিমান্ড চাওয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর