ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আশরাফ বাবলু হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কুড়িগ্রাম শহর। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ ও বেলগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
ছাত্রলীগের দাবি, বাবলু হত্যা বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন মিয়ার উসকানিতে। চেয়ারম্যানের ভাষ্য, তাকে বাবলু হত্যা মামলায় জড়ানোয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে নেমেছেন।
বাবলু হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করে জেলা ছাত্রলীগ।
একই সময় শহরের ত্রিমোহনী বাজারে সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন লিটনপন্থিরা। বাবলু হত্যা মামলা থেকে চেয়ারম্যান লিটনের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
এর আগে বুধবার সকালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় হামলায় আহত ছাত্রলীগ কর্মী বাবলুর।
বাবলু হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি রাশেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেয়া হয়েছে বলে জানান কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার।
কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে দুপুরে ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তব্য দেন বাবলুর বাবা শহিদুল ইসলাম, মা মনোয়ারা বেগম, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাজু আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
ত্রিমোহনীর সমাবেশে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ মজনু, বেলগাছা ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম, আমির হোসেন ও সুমা আক্তার।
ছাত্রলীগের সমাবেশ থেকে বলা হয়, একটি পক্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে। হাত-পা কেটে নিচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মীদের। এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
ত্রিমোহনীর সমাবেশে বলা হয়, একটি মহল নানাভাবে রাজনৈতিক বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে মামলা-মোকদ্দমায় নিরীহদের নাম দিয়ে হয়রানি করছে। এটা বন্ধ করা হোক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বেলগাছা ইউনিয়নের নীলকণ্ঠ গ্রামের শহিদুল ইসলামের সঙ্গে একই পাড়ার এক গৃহবধূর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুন রাত ১টার দিকে আলী হোসেনের উঠানে সালিশ বসে। ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ লোকজন সালিশে উপস্থিত হন।
অভিযুক্ত শহিদুলকে সালিশে ডাকা হলেও তিনি যাননি। সালিশের লোকজন শহিদুলকে ডাকতে তার বাড়ি যান।
মামলায় বলা হয়, সালিশের লোকজনের সঙ্গে শহিদুলের ছোট ছেলে জেলা ছাত্রলীগ কর্মী শামীম আশরাফ বাবলুর কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় এজাহারে উল্লেখিত আসামি বাপ্পী মিয়া ও তার বাবা নুরল কসাই লাঠিসোঁটা নিয়ে বাবলুর ওপর হামলা করেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশে আনোয়ার হোসেন, হ্যাভেন ও মাহবুব বাড়ির লোকজনের ওপর হামলা চালান।
হামলায় গুরুতর আহত বাবলুকে রাতেই কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বুধবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনা বুধবার বিকেলে বাবলুর বড় ভাই মশিউর রহমান বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ থেকে সাতজনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার করেন। সেখানে বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যানকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাজু আহমেদ বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার উসকানিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। বাবলু আমাদের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ ব্যাপারে বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হতে বলা হলে আমি যাই। অভিযুক্ত শহিদুল উপস্থিত না হওয়ায় আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে বাবলুকে কারা মেরেছে আমি জানি না। ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না।
‘পুলিশ প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসুক সেটা আমিও চাই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এজাহারে আমার নাম দেয়া ঠিক হয়নি। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ত্রিমোহনীতে সমাবেশ করেছে।’
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার জানান, হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি রাশেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেয়া হয়েছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।