কুষ্টিয়ায় আবারও চালের দাম বেড়েছে। চিকন চালের দাম বেড়েছে ১ টাকা। আর মোটা চালে ২ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চালকল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করছেন চালকল মালিকরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোথা থেকে বাড়ল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মাসখানেক ধরে কুষ্টিয়ার বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা কেজি দরে। বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার পৌর বাজারের কয়েকটি খুচরা বিক্রেতা ৬৭ টাকা করে বিক্রি শুরু করেছেন।
মেসার্স মা ট্রেডার্সের আহমেদ মনজুরুল রিপন বলেন, ‘হঠাৎ করে খাজানগরের মিল থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়ায় তাদেরও দাম বাড়াতে হয়েছে। মিল মালিকরা ৫০ কেজির বস্তার দামের তুলনায় ২৫ কেজির বস্তায় ১০ টাকা দাম বেশি ধরেন। এতে কেজি প্রতি ৪০ পয়সা বেড়ে যায়।’
এ হিসাবের বাইরেও দাম বাড়ানোর কথা বলেন রিপন। মিল থেকে ৫০ কেজির চালের বস্তা কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘মিল থেকে এখনও তারা চাল পাচ্ছেন না। আজ অর্ডার দিলে কয়েক দিন পর চাল দেবে। তাই তাদের কিনতে হচ্ছে পাইকারদের আড়ত থেকে।’
সব মিলিয়ে দোকানে এনে প্রতি কেজি চাল পড়ছে ৬৫ টাকারও ওপরে। তাই ৬৭ টাকা বেচতে হচ্ছে। বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে অবশ্য আগের দাম ৬৬ টাকা কেজিতেই বেচতে দেখা গেছে।
শাপলা ট্রেডার্সের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মিলে দাম বেড়েছে শুনেছি। আমার দোকানে এখনও বেশি দামের চাল আসেনি। তাই আগের দামেই বেচতে হচ্ছে।’
একই কথা বলেন নিউ স্বপন স্টোরের মো. স্বপন। তিনি বলেন, ‘মোটা চালের দামও বাড়ানো হয়েছে বস্তায় ৬০ টাকা। এতে খুচরা পর্যায়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের মোটা চাল।’
এদিকে মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর কথা অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, ১০ দিন হলো তাদের বেচাকেনা ও অর্ডার কমে গেছে। আগের দামেই চাল বেচছেন তারা।
জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘মিল থেকে ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার ২০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। এতে খুচরা পর্যায়ে ৬৬ টাকায় বিক্রি করার কথা। কী কারণে কোথা থেকে ৬৭ টাকা হলো তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার।’
খাদ্য বিভাগও খতিয়ে দেখার কথাই বলছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ‘ পাঁচটি মনিটরিং টিম কাজ করছে। কোনো অসংগতি পেলে টাস্কফোর্সকে খবর দেবে। আর তখনই অভিযান চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কুষ্টিয়ার খাজানগরে আছে চার শতাধিক রাইস মিল। এর মধ্যে ৫২টি বৃহৎ অটোমেটিক রাইস মিল। এখানে দাম বাড়লে সারা দেশে তার প্রভাব পড়ে।
এবার বোরো মৌসুমের শুরুতে এক মাসের ব্যবধানে আট দফায় মিনিকেট চালের দাম বেড়েছিল কেজিতে ১১ টাকা। ওই সময় থেকেই মিল মালিকরা ধানের দাম বেশি থাকার কথা বলে আসছেন।
ওই সময় প্রশাসনের অভিযান জোরদার করা হলে এ মাসের ৫ তারিখে কেজিতে এক টাকা কমে দাম। সেই থেকে কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে ৬৬ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছিল মিনিকেট চাল। এর ২৫ দিন পর আবার এক টাকা বেড়ে গেল দাম।
দফায় দফায় দাম বাড়ানোতে ক্ষুব্ধ সাধারণ ভোক্তারা। মো. রফিক নামে একজন বলেন, ‘অজুহাত পেলেই দাম বাড়াতে থাকেন চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।’ এদের সিন্ডিকেট দমন করতে তিনি সরকারকে চালকল দিয়ে নিজে উৎপাদনে যাওয়ার পরামর্শ দেন।