বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিয়েবার্ষিকীতে এত কষ্ট কেন বিউটির

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২২ ১৫:০৪

শোক শেষ হতে না হতেই সেই সাত পাকে বাঁধা পড়ার দিনটি বিউটিকে আবার কান্নার সাগরে ভাসাচ্ছে। যে দিনটি প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে মধুর স্মৃতি রোমন্থন করে কাটাতেন তিনি, সেই দিনটিতে সকাল থেকেই ডুকরে কাঁদছেন তিনি। ‍সুখের সেই স্মৃতি আজ তাকে কেবলই বেদনায় আর্ত করছে।

স্বামী হারানোর কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে জীবনযুদ্ধ শুরু করতে না করতেই বুক ফেটে কান্না আসছে বিউটি রানী নন্দীর।

তার প্রিয়তম মানুষটি, যার হাত ধরে নতুন জীবনের শুরু, সাত পাকে বাঁধার পর যাকে সুখ-দুঃখের সঙ্গী করেছিলেন, সেই শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ তারই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি গত ২৫ জুনের। ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে পেটানোর পরদিন হাসপাতালে মারা যান উৎপল। এরপর শোকের পাহাড় ডিঙিয়ে প্রিয়জনকে শেষ বিদায় দেন বিউটি।

শোক শেষ হতে না হতেই সেই সাত পাকে বাঁধা পড়ার দিনটি বিউটিকে আবার কান্নার সাগরে ভাসাচ্ছে। যে দিনটি প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে মধুর স্মৃতি রোমন্থন করে কাটাতেন তিনি, সেই দিনটিতে সকাল থেকেই ডুকরে কাঁদছেন তিনি। ‍সুখের সেই স্মৃতি আজ তাকে কেবলই বেদনায় আর্ত করছে।

দুজনের সংসারের শুরু ২০১৯ সালের ৩০ জুন। পরের বছর প্রথম বিয়েবার্ষিকীতে করোনার বিধিনিষেধের কারণে একান্ত নিজেদের মধ্যে কেটেছে দিনটি। ২০২১ সালেও একই চিত্র। এবার পরিকল্পনা ছিল আনন্দটি ভাগাভাগি করে নেবেন স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীদের সঙ্গে।

অনেক পরিকল্পনা ছিল। সব পরিকল্পনা, স্বামীর কথা, স্মৃতি আজ বুকে শূলের মতো বিঁধছে বিউটির। স্বামীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়েই বারবার কণ্ঠরোধ হয়ে আসছে তার।

বিউটি বলেন, 'দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীতেও আমি ছিলাম মিরপুরে আর ও ছিল জামগড়ায়। তখনও করোনার প্রকোপের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারিনি। গত নভেম্বর থেকে আমরা দুজনে মিরপুর আনছার ক্যাম্পে ভাড়া বাসায় উঠেছি। সবে সংসারটা গুছিয়ে নিচ্ছিলাম।

‘কারণ বিয়ের পর থেকেই ও (উৎপল) জামগড়ায় দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। আমি মাঝে মাঝে ওখানে যেতাম। আজ ৩০ জুন আমাদের তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীতে সবাইকে নিয়ে পালন করতে চেয়েছিলাম। ওর বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এমনকি শিক্ষার্থীদেরও দাওয়াত করেছিল। এইবারেই প্রথম একটু জাঁকজমক করে বিবাহবার্ষিকীটা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও হলো না।’

উৎপলের শখটা পূরণ হলো না- এটিও বিউটিকে পীড়া দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ওর শখটাই বেশি ছিল। অনেক দিন ধরেই বলতেছিল। গত বছরও পালন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তখনও করোনার কারণে হয়নি।’

নিজের সন্তান হবে- এ কথা বারবার স্ত্রীকে বলতেন উৎপল। তার অন্য সব ইচ্ছার মতো এটিও পূরণ হয়নি।

বিউটি বলেন, ‘মাসখানেক একটা কথা বলত; সুন্দরভাবে সংসার করবে, বাচ্চার বাবা হবে, তাকে বাবা বলে ডাকবে। এই কষ্ট আমি কাকে বোঝাব? কিন্তু আজ ও আমার কাছে নেই।

‘আমি এখন কী করব বুঝতে পারছি না। দিশেহারা অবস্থায় আছি। বিভিন্ন দিকে বিভিন্ন কল্পনা যখন করছি তখনই ওকে মনে হচ্ছে। ওর অনেক প্রয়োজন সেটা অনুভব করছি। ওর অভাবটা আমাকে খুব পীড়া দিচ্ছে। কোনো কাজ করতে গেলেই ওকে আমার পাশে দরকার। আমি শূন্য অবস্থায় আছি। বাসায় কোনো কাজ করলে ওর পরামর্শ নিয়ে করতাম। ওকে ছাড়া কোনো কাজই আমি সম্পূর্ণ করতে পারছি না।’

বিউটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পারসোনাল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। সে হিসেবে তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। তবে সঙ্গীহীন এই জীবন তাকে শূন্য করে দিয়েছে।

তিনি জানান, ওই অঞ্চলের পরিবেশের কথা চিন্তা করে উৎপলকে কলেজের পরিবেশ কমিটিতে না থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কলেজ থেকে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জানিয়ে স্ত্রীর কথা শোনেননি উৎপল।

বিউটি রানী বলেন, ‘কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রেমের বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হতো। এসব সমাধান করত। শিক্ষার্থীরা তাকে ভয় পেত সেই কথাও বলেছিল আমাকে। তবে তাকে মেরে ফেলতে পারে এমন বড় কোনো বিষয় জানায়নি।’

উৎপলের বড় ভাই অসীম কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সবাই একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মা পাগলের মতো হয়ে গেছে। উৎপলের স্ত্রী এখন আমাদের বাড়িতে সিরাজগঞ্জে আছে। মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।

‘তিন বছর আগে বিয়ের অনুষ্ঠানটাও ঠিকভাবে করা হয়নি। এরপর দুই বছর ছিল করোনা। উৎপল বলেছিল, আজকে আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করে বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করবে। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আজ সবাই আছে, কিন্তু আমার ভাই আর নেই।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন উৎপল কুমার সরকার। এই প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ কমিটির সভাপতিও ছিলেন।

গত শনিবার দুপুরে কলেজ মাঠে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ‍ওঠে একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে।

পরদিন রোববার সকালে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় উৎপলের। একই দিন তার বড় ভাই অসীম কুমার আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার তিন দিন পর বুধবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আসামি জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে এবং পরে গাজীপুর থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যার পর জানা যায়, জিতুর সঙ্গে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি সেখানকারই এক শিক্ষকের শ্যালিকা। জিতুর বিরুদ্ধে আগে থেকেই বখাটেপনার অভিযোগ ছিল।

দুইজনকে স্কুলের একটি কক্ষে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখার পর মেয়েটির পরিবারকে বিষয়টি জানান উৎপল। মেয়েটিকে এই পথ থেকে ফেরানোর পরামর্শ দেন তিনি। পরে সেই ক্ষোভ থেকেই উৎপলকে পেটানো হয়।

জিতুকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের বর্ণনাতেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

এ বিভাগের আরো খবর