পদ্মা সেতু নিয়ে নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ইউনূস সেন্টার যে বক্তব্য দিয়েছে, তাকে সত্যের অপলাপ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এই সেতুতে ইউনূসের ভূমিকা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
ইউনূস সেন্টার থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে আসা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘ইউনূস সেন্টার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা সত্যের অপলাপ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। তিনি যে পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছেন এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
‘তিনি আগে কখনও এ কথা বলেননি যে আমি এই অপচেষ্টা চালাইনি। বরং যখন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হলো, তখন দম্ভ করে বিভিন্ন জায়গায় নানা কথা তিনি বলেছিলেন। সে কথাগুলো এখনও বাতাসে ভেসে বেড়ায়।’
পদ্মা সেতু নিয়ে নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ইউনূস সেন্টার যে বক্তব্য দিয়েছে তাকে সত্যের অপলাপ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি কোলাজ: নিউজবাংলা
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের ঋণ চুক্তি বাতিলের পর সরকার নিজ অর্থে এই সেতু করেছে। সরকার শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে, বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগ ভুয়া। ইউনূসের বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তাকে পদে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সরকারকে চাপ দিয়েছিলেন। সরকার সেই চাপে নতি স্বীকার না করায় হিলারিকে দিয়ে সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করা হয়।
২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে বায়বীয় ও গালগপ্প বলে উড়িয়ে দেয়ার পর ইউনূসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আরও জোরেশোরে তুলতে থাকে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বক্তব্যে এই সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের পেছনে ইউনূসের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন। তারপরেও সেতু উদ্বোধনে যে আয়োজন করা হয়, সেখানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইউনূস দেশে থাকলেও সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করেননি।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার তোলা অভিযোগের মধ্যেও এই বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি নীরব থাকেন ইউনূস। অবশেষে বুধবার (২৯ জুন) তার নামে প্রতিষ্ঠিত ইউনূস সেন্টার থেকে বক্তব্য পাঠানো হয় গণমাধ্যমে।
এতে বলা হয়, ‘গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. ইউনূসের অপসারণ বিশ্বব্যাপী সংবাদে পরিণত হয়েছিল। তারা অধ্যাপক ইউনূসকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না, তারা দেখতে চাইছিলেন গ্রামীণ কর্মসূচিগুলোর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। এর সঙ্গে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বিষয়টিকে মিশিয়ে ফেলে একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনি সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সব মানুষের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন, তিনিও এ স্বপ্নে বিশ্বাসী। তিনি এই ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানান।
‘পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ এবং একজন সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বৈঠক করার বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুই বন্ধুর খেয়ালখুশি কিংবা একজন পত্রিকা সম্পাদকের সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার ওপরও নির্ভর করে না। কোনো ধরনের বৈঠকে করা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত।’
তথ্যমন্ত্রী ইউনূস সেন্টারের এই বক্তব্যকে খণ্ডন করে বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে অনেকেই কাজ করেছিলেন। কুশীলব হিসেবে কাজ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন জনাব ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
‘তার সঙ্গে হিলারি ক্লিনটনের বিশেষ সখ্য থাকার সুবাদে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের যে চেষ্টা চালিয়েছেন, বন্ধ করার ক্ষেত্রে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট, সেটি দেশ-বিদেশের সবাই জানে।’