খুলনায় স্কুলশিক্ষক মুনজির আহমেদ হত্যা মামলায় ২ আসামিকে যাবজ্জীবন করাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বিস্ফোরক মামলায় ওই দুই আসামিকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে ৬ আসামিকে।
খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মাহমুদা খাতুন বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন। হত্যার ১৭ বছর পর এ রায় হলো।
রায়ের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কে এম ইকবাল হোসেন।
যারা সাজা পেয়েছেন তারা হলেন খুলনার খানজাহান আলী থানার গিলাতলা ১ নম্বর কলোনির আনোয়ার হোসেন ও একই এলাকার মো. আশ্রাফ আলী। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
খালাস পাওয়ারা হলেন বাদশা শেখ, মো. সোহেল, মো. রুবেল, মেজবাহ উদ্দিন মুকুল, মো. আহাদ ও একেন্দার ওরফে এসকেন।
এ ছাড়া চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে মো. দাউদ, মো. মঈন ও নেয়ামুল ইসলাম কুটি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
এ মামলার অপর আসামি আরিফুর রহমানকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৪৯৪ ধারায় আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
মুনজির আহমেদ ওরফে মুনজির মাস্টার মাত্তমডাঙ্গা এলাকার শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ছিলেন স্থানীয় এজিএম যুব সংঘের সদস্য।
অভিযোগপত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, ২০০০-২০০৬ সাল পর্যন্ত খুলনার মানুষ সব সময় চরমপন্থীদের আতঙ্কে দিন পার করতেন। এরই মধ্যে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কিছু নেতা মুনজির মাস্টারের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।মুনজির মাস্টার স্থানীয় সাংবাদিক মো. মনিরকে বিষয়টি জানান। মনির বিভিন্ন সভা ও সমাবেশে পূর্ব বাংলার নেতাদের নাম উল্লেখ করে বক্তব্য দিতে থাকেন।
আইনজীবী কে এম ইকবাল হোসেন জানান, ২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে মুনজির মাস্টার মাত্তমডাঙ্গা যুব সংঘের ভেতরে গিয়ে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। রাত সোয়া ৯টার দিকে প্রধান ফটক দিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী যুব সংঘের ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগে সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে একের পর এক বোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। এর মধ্যে দুটি বোমা মুনজির মাস্টারের হাতে-পিঠে লাগে।
মারাত্মক জখম অবস্থায় যুব সংঘের অন্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে রাত ১টার দিকে তিনি মারা যান। তবে মারা যাওয়ার আগে তিনি ভাই বেনজীর আহমেদের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে যান।
জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নিহতের ভাই বেনজীর আহমেদ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় থানায় দুটি মামলা করেন।
হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন খানজাহান আলী থানার এস আই ফারুকুল ইসলাম। তিনি একই বছরের ১২ ডিসেম্বর বোমা ও ২০০৬ সালের ৩০ জুন হত্যার ঘটনায় মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের আসামিরা হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এসব কাজের বিরোধিতা করায় মুনজির মাস্টারকে হত্যা করা হয়, যা কয়েকজন আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।