পদ্মা সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগ এনে বাংলাদেশের মানহানি করা হয়েছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, অভিযোগকারীদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি দিতে হবে ক্ষতিপূরণ।
লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সকালে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন ১০ বছর পিছিয়ে দেয়। এতে বাংলাদেশের জিডিপির গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) বাধাগ্রস্ত না হলেও আর্থিকভাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে যায়।
‘তারা কেবল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা থামিয়েই দেয়নি, দুর্নীতির ধুয়া তুলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করেছে; বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিপরায়ণ দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এর ক্ষতিপূরণ তাদের দিতে হবে।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ তুলেছিল বিশ্বব্যাংক। সেতুর পরামর্শকের কাজ পেতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা জানতে পারার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি।
এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়। সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করতে থাকে বিরোধীরা।
সরকার শুরু থেকেই সব অভিযোগকে ‘বায়বীয়’ বলে এলেও আক্রমণ কমেনি। পরে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ নাকচ হয় কানাডার আদালতের রায়ে।
নিজস্ব অর্থে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে উদ্বোধন হয় গত ২৫ জুন। এর আগে বিশ্বব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিশাল অবদান রাখবে।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে ‘পদ্মা সেতু: এক দশকের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির মাইলফলক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানটি হয়।
বক্তব্যে গত এক দশকে বাংলাদেশ যে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাংলাদেশকে ধান উৎপাদনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে পরিণত করেছে, যা ১১ লাখ টন থেকে চার গুণ বেড়ে ৪৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। তার ব্যবসাবান্ধব সরকার রপ্তানি আয় ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে।
‘এর পাশাপাশি যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডসহ প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রেরণ করায় আমাদের অর্থনীতি মহামারি চলাকালীনও একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছিল।’
মোমেন তার বক্তৃতায় সিলেট ও বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার বন্যার্তদের বিষয়টি সামনে আনেন।
তিনি বলেন, বন্যাদুর্গতদের পর্যাপ্ত সহায়তা নিশ্চিত করতে তিনি সরকারের উচ্চমহল ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি বন্যায় যেসব জেলায় শিশুদের বই হারিয়ে গেছে, সেগুলোতে বই সরবরাহের কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের কিছু সমস্যার কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীদের জমি ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ ও মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছি এবং বাংলাদেশের বিমানবন্দরে নিরাপত্তা পরীক্ষা আরও সহজ করতে এবং সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে পাসপোর্ট ইস্যু করতে বলেছি।’
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে আমাদের একটি স্বাধীন জাতি উপহার দিয়েছিলেন। ৫১ বছর পর তার স্বপ্নদ্রষ্টা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু দিয়েছেন আমাদের, যা বাংলাদেশের স্বনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদার এক গৌরবময় প্রতীক এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির একটি মাইলফলক।’
হাইকমিশনার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিদের রেকর্ড রেমিট্যান্স দেশে পাঠানোর প্রশংসা করেন।
সিলেট বিভাগসহ বাংলাদেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও জরুরি সহায়তা দিতে হেল্পলাইন স্থাপন করেছে।
তিনি বলেন, ‘যদি বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানো ও বিতরণের জন্য কারও সহায়তার প্রয়োজন হয়, তারা হাইকমিশনের ফেসবুকে দেয়া হেল্পলাইনের মাধ্যমে হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’