বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতু হয়ে শরীয়তপুরবাসীর লাভ কী হলো

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২২ ০৮:৪১

পদ্মা সেতু চালুর পর শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছে এসব বাসে। কিন্তু শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট ও কাজিরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ১২ ফুট চওড়া সড়ক দিয়ে এসব বাসকে চলতে হচ্ছে। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চালকদের।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানীর সঙ্গে শরীয়তপুরের যোগাযোগ যতটা সহজ হবে ভাবা হয়েছিল, হয়নি তা। ৭০ কিলোমিটার পথ পারি দিতে সময় লাগছে চার ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি।

সেতু চালু হওয়ার আগেও এই পথ পারি দিতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাই লাগত। এ কারণে শহরের বাসিন্দারা ভীষণ হতাশ।

এর কারণ জেলা শহর থেকে সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়কটি একেবারেই সরু। বিপরীত দিক থেকে আসা রিকশাকে সাইড দিতেও বাসগুলোকে সড়কের এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ কারণে পুরো পথই চলতে হয় ধীরগতিতে।

জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ২৭ কিলোমিটার সড়ক পার হতেই সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা আর সংযোগ সড়ক থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ৪৩ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও কম।

এই সমস্যা হতে পারে ভেবে ২০২০ সালের শুরুতেই এই সড়কটি চওড়া করার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে দেয় সরকার। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেই প্রকল্প এগিয়ে নিতে পারেনি। এখন তারা দোহাই দিচ্ছে করোনার। বলছে, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আগামী দুই বছরে সড়কটি চওড়া করা হবে।

অর্থাৎ পদ্মা সেতুর পুরোপুরি সুফল পেতে শরীয়তপুরবাসীর লাগবে আরও দুই বছর।

২৬ জুন থেকে সেতুতে যান চলাচল শুরুর পর আশাভঙ্গের বেদনা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন জেলা সদরের সুমি আক্তার।

প্রথম দিনই সেতু পাড়ি দিয়ে রাজধানীতে যেতে শরীয়তপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চেপে বসেন তিনি। আশা করছিলেন, ৭০ কিলোমিটার সড়ক দেড় ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছবেন। কিন্তু খানাখন্দে ভরা সরু সড়কের যানজট অতিক্রম করে ঢাকা পৌঁছতে সুমির সময় লেগেছে ৪ ঘণ্টারও বেশি।

সুমি আক্ষেপ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতুর পুরাপুরি সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। শরীয়তপুর অংশের সরু সড়কের যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। এত সরু সড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে কয়েকবার দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। কষ্ট লাগে এই ভেবে আমাদের জেলায় পদ্মা সেতু হলেও আমরাই শতভাগ সুবিধা পাচ্ছি না।’

পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে ১৮ বছর পর শরীয়তপুর থেকে সরাসরি ঢাকায় বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছে এসব বাসে।

শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের ২৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকে দীর্ঘ যানজট। ছবি: নিউজবাংলা

কিন্তু শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট ও কাজিরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত মাত্র ১২ ফুট চওড়া সড়ক দিয়ে এসব বাসকে চলতে হচ্ছে। বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনকে সাইড দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে চালকদের।

ফলে যানবাহনের চাপ কম থাকলেও এই ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সরু সড়কে চালাতে গিয়ে গত ৩ দিনে ছোট বড় অন্তত চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের উজ্জ্বল মাঝি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হয়েছে অথচ আমরা সুফল পাচ্ছি না। চার বছর আগে প্রকল্প অনুমোদন হলেও এত দিন কাজ হয়নি। চলতি মাসে কেবল কাজ শুরু করেছে। ঢাকা যেতে শরীয়তপুর অংশের সড়কের মধ্যে থাকা অবস্থায় সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয়। অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গেলে রাস্তা ছেড়ে গাড়ির চাকা মাটিতে নেমে যায়। বর্ষার দিনে খুবই ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে।’

শহরের বাসিন্দা সোহাগ সুজন মোল্লা বলেন, ‘রাস্তা ভাঙা ও সরু থাকার কারণে ভালো কোনো কোম্পানি এই রুটে বাস চালাতে চাইছে না। ফলে আমরা ভালো মানের সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। গতকাল ঢাকা যাওয়ার সময় অন্য গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে আমাদের গাড়িটি হেলে গিয়েছিল। সব যাত্রীই আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করছি।’

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস বাসের চালক মো. হাবিব বলেন, ‘শরীয়তপুর থেকে কাজিরহাট পর্যন্ত কোনো রকমে যেতে পারলেও ওখান থেকে মাত্র ১২ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে পরের ১০ কিলোমিটার যেতে হয়। একটি রিকশাকে সাইড দিতেও গাড়ির চাকা সড়কের বাইরে চলে আসে। সড়কটি উন্নয়ন হয়ে গেলে মাত্র দেড় ঘণ্টায় যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছে দেয়া যাবে।’

এমন হওয়ার কথা ছিল না

শরীয়তপুরবাসীর এই ভোগান্তি হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। কারণ সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বাড়বে, এই অবশ্যম্ভাবী বিষয়টি ধরে নিয়ে সরকার প্রায় আড়াই বছর আগেই একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে দেয়। কিন্তু সেটি এগিয়ে নেয়ার কাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।

যাত্রী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে সবাই গাফিলতি করেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখন আরও দুই বছর সময় চাইছে।

পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার ২৮ মাস আগেই ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নয়নের প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি একনেক।

১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১ হাজার ২৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সড়ক ও ২৭টি কালভার্ট উন্নয়নে ৩৯১ কোটি ও দুটি সেতু নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয় ৫৯ কোটি টাকা।

তিনটি প্যাকেজে ভাগ করা প্রকল্পে প্রথম প্যাকেজে ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা শহর থেকে জাজিরা পর্যন্ত ১৩.৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ শুরুও হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই অংশের কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ।

দ্বিতীয় প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত কোটাপাড়া ও কাজিরহাট এলাকায় নির্মাণাধীন দুটি সেতুর অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। তৃতীয় প্যাকেজে থাকা জাজিরা থেকে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত ১৩.৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের টেন্ডার কেবল শেষ হয়েছে।

চার লেনের সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও প্রাথমিকভাবে ৩৪ ফুট প্রস্থ্যের দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ জন্য অধিগ্রহণ করতে হবে ১০৫ হেক্টর জমি।

২২টি এলএ কেসের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ কাজ করছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে যৌথ তদন্ত হয়েছে ৭টির। একটির ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর ও একটির চেক হস্তান্তর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রম চলমান।

চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূইয়া রেদওয়ানুর রহমান নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি অনুমোদনের পর করোনা মহামারিতে আশানুরূপ কাজ করা সম্ভব হয়নি।

‘তাছাড়া প্রথম বছর অর্থ বরাদ্দও ছিল অনেক কম। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করি আগামী দুই বছেরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর