রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে বহিষ্কার আইন বিভাগের ছাত্র আশিক উল্লাহকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
একই বিভাগের অধ্যাপক বেগম আসমা সিদ্দীকার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে বুধবার বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের আদালত পরিদর্শক হাসেম আলী জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এ হাজির করা হয় আশিককে। বিচারক ফয়সাল তারেক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই আশিককে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বলে জানান ওসি।
এজাহারের বরাতে ওসি জানান, ফেসবুকে ‘আশিকনামা’ নামের একটি পেইজ চালান আশিক। তাতে আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুৎসা, মানহানিকর ও অশ্লীল পোস্ট দেয়া হয়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হেয়-প্রতিপন্ন হয়েছেন।
আশিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আশিক একাধিকবার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশের বিঘ্ন ঘটিয়েছেন। বিভিন্ন সময় তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হত্যার হুমকিও দিয়েছেন। বুধবার আইন বিভাগের ক্লাসরুমে অধ্যাপক ড. বেগম আসমা সিদ্দীকাকে তিনি হেনস্তা করেন।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আশিককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শৃঙ্খলা কমিটি ও সিন্ডিকেটের রিপোর্ট সাপেক্ষে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষককে হুমকি দেন আশিক। এ সময় তাকে বিভাগের সভাপতির কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে বিভাগ থেকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আশিক উল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার, প্রকাশ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষকের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলার দাবি জানান।
শিক্ষকের সঙ্গে অশোভন আচরণের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
আইন বিভাগ ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার চতুর্থ বর্ষের ক্লাস চলার সময় ইমপ্রুভমেন্টের কথা বলে ক্লাসে প্রবেশ করেন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আশিক উল্লাহ। কিন্তু তার কোনো ইমপ্রুভমেন্ট ছিল না। ক্লাসের শেষ দিকে অধ্যাপক বেগম আসমা সিদ্দীকাকে বিব্রত করার জন্য অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে থাকেন তিনি।
একপর্যায়ে শিক্ষক ক্লাস থেকে বের হতে গেলে আশিক উল্লাহ দরজা লাগিয়ে তাকে মারার জন্য উদ্যত হন। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্লাসরুমে আটকে রেখে ওই শিক্ষককে রক্ষা করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক অধ্যাপক বেগম আসমা সিদ্দীকা বলেন, ‘আমি চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শেষ করে বের হতে গেলেই সে আমার পথ রোধ করে। ডিপার্টমেন্টের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয় নিয়ে আমার কাছে সমাধান চাইলে আমি তাকে চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে কথা বলতে বলি। কিন্তু সে তা না শুনেই আমার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে।’