আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির পরও জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জ্বালানির দাম আবার বাড়তে পারে বলে আলোচনার মধ্যেই জাতীয় সংসদে স্বস্তির এই বার্তা দিলেন সরকারপ্রধান।
বুধবার রাতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিনে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়ে চলেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ধারাবাহিক ভর্তুকির চাপে সরকার জ্বালানির দর সমন্বয়ের কথা ভাবছে বলে গত ১৪ জুন জানান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
সেদিন বিদ্যুৎ ভবনে এক সেমিনারে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপিসি প্রতিদিন শত কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। গ্রাহকেরা চাপে পড়ুক এটাও সরকার চায় না। তবে এটা সবার জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার কাজ করছে।
‘বর্তমানে বিশ্ব যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের বর্তমান যে অবস্থা তাতে এই সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করব কি না, সেটা আগে ভাবতে হবে। এ নিয়ে কাজ করছে সরকার। তবে গ্রাহকের জন্য যেন দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে বিষয়টি আগে দেখা হবে।’
সবশেষ গত ৩ নভেম্বর ডিজেলের দর লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। এর প্রভাবে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে অনেকটাই। এর প্রভাব আবার পড়েছে পণ্যমূল্যে।
ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার বাইরে নয় বাংলাদেশও। এর মধ্যে জ্বালানির দাম আবার বাড়লে পরিস্থিতি কী হয় তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আপাতত সেই শঙ্কা দূর করলেন। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা আমরা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে চাপিয়ে দেব না। যার কারণে ভর্তুকি ব্যয় বাড়বে। ভর্তুকি ব্যয় সহনশীল রাখা এবং আমদানির ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা সরকার নেবে। জনগণকেও নিজ নিজ জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে।’
দীর্ঘ বক্তব্যে সরকারপ্রধান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি বিলাস দ্রব্য পরিহার এমনকি দেশেই চিকিৎসা নেয়ার অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে, ব্যক্তিগত সঞ্চয় করতে হবে। প্রত্যেকের নিজস্ব সঞ্চয় বাড়ানো এবং প্রত্যেককে মিতব্যয়ী হতে হবে।
‘দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কথায় কথায় দৌড়ায়ে বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা নেয়া যাবে না। দেশেও ভালো চিকিৎসা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একে তো করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব, তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এসব প্রতিকূলতা মোকাবলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।’