ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর বিলম্বিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যাতে পদ্মা সেতু না হয় সে লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হলেও আমরা হতোদ্যম হইনি। সব ষড়যন্ত্র আর বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে আমিও আনন্দিত, গর্বিত, উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহুল কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে।
‘পদ্মা সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়। এই সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং প্রত্যয়। একইসঙ্গে রয়েছে- আমরা এ সেতু করবোই, সেই জেদ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলো। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।’
পদ্মা সেতু নির্মাণের ইতিহাস তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি।
‘২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারা জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন পেশ করে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নকশা প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন প্র্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।’
ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলার সময়ই ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইডিবি ঋণচুক্তি স্থগিত করে।
‘২০১৭ সালে কানাডার টরেন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দেয়। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত নেই।
‘বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূচনালগ্নে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চ্যালেঞ্জগুলো উত্তরণ এবং হার না মানা সুদৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এ সেতু আজ স্বপ্ন নয়, একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা।’
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি সর্বোপরি দেশের বিভক্ত দুটি অঞ্চলকে একীভূত করে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে সরকারপ্রধান আশা প্রকাশ করেন।