বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লালমাই পাহাড়ে কিশোররা খুঁজে ফেরে যারে

  •    
  • ২৯ জুন, ২০২২ ১১:২০

লালমাই পাহাড়ে ঘন বন আর পাতার আড়ালে উঁকি মারে টক-মিষ্টি স্বাদের এক ফল। কাঁঠালের মতো দেখতে কিন্তু তুলনামূলক ছোট এই ফলটিকেই খুঁজে ফেরে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার দুষ্টু কিশোরের দল।

আষাঢ়ের আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। রোদের উত্তাপে হাঁসফাঁস চারপাশ। এমন গরমেই দুষ্টু ছেলেমেয়ের দল হানা দেয় কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার লালমাই পাহাড়ে। সেখানে গাছে গাছে ঝুলে আছে হলুদ চাপালিশ!

পাকা এই চাপালিশ ভেঙে অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে কোষগুলো নিয়ে শুকনো মরিচ পোড়ায় কিশোর-কিশোরীর দল। হাল্কা মিষ্টি আর টক স্বাদের চাপালিশে ঝাল মিশিয়ে মুখে পুরে নেয় তারা। তারপর ওঠে তৃপ্তির ঠেকুর। দুপুরে উদরপূর্তির জন্য এর চেয়ে ভালো আয়োজন কি হতে পারে?

চাপালিশ দেখতে কাঁঠালের মতোই। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। আর পাকলে হলুদ হয়ে ওঠে। আকারে ছোট এই ফলটির ভেতরে কাঁঠালের মতোই ছোট ছোট কোষ থাকে। কোষের ভেতরে থাকা এর বীচিগুলোও অনেকে আগুনে পুড়িয়ে খায়। কিছুটা চিনা বাদামের স্বাদ পাওয়া যায় এতে।

টক মিষ্টি স্বাদের এই চাপালিশকে স্থানীয়রা চামল বা চাম্বল নামেই চেনে। লালমাই পাহাড়ে শত বছর আগে প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছিল চাপালিশের বন। ঘন সবুজ পাতার আড়াল থেকে উঁকি মারা পাকা চাপালিশ যে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

আষাঢ় মাসেই চাপালিশ পাকতে শুরু করে। ৯০-এর দশকে লালমাই পাহাড়ে যে পরিমাণ চাপালিশ গাছ ছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই।

কোটবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ জানান, পুরো লালমাই পাহাড়ে বর্তমানে অর্ধশতাধিক চাপালিশ গাছ আছে। এক সময় এই সংখ্যাটি ছিল হাজারেরও বেশি। কাঠের জন্য কিংবা জমি প্রশস্থ করতে গত কয়েক বছরে স্থানীয়রা বহু চাপালিশ গাছ কেটে ফেলেছে।

ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘পাশের সেনানিবাসের ভেতর বর্তমানে বেশকিছু চাপালিশ গাছ রয়েছে।’

কোটবাড়ি এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পার্শ্বে হাতিগড়া এলাকায় চাপালিশ বিক্রি করেন চা দোকানীরা। দোকানের সামনে ঝুড়িতে রাখা থাকে ফলটি। কেউ আবার ক্রেতা আকর্ষণের জন্য এটিকে দোকানের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন।

চা দোকানী খায়ের মিয়া বলেন, ‘প্রতিটা ২০ টাকা করে বেচি। আষাঢ়-শাওন মাসে কাঁঠালের সাথে চামলও পাকে। শহর থেকে আসা মানুষেরাও শখ করে কিনে নিয়ে যায়। একটা গাছে ২ থেকে ৩ মন চাপালিশ ধরে।’

খায়ের জানান, লালমাই পাহাড়ে একসময় এত পরিমাণ চাপালিশ হতো যে, এগুলো খেতে শত শত বানর এসে ভিড় জমাতো। চাপালিশ কমার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকাটিতে এখন বানরের সংখ্যাও কমে গেছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘চাপালিশ একটি বিপন্ন উদ্ভিদ। আবাসস্থল ধ্বংস এবং মাত্রাতিরিক্ত আহরণের জন্য চাপালিশের বিস্তৃতি নাই বললেই চলে। সরকারের উচিত পরিকল্পিত বনায়নের অংশ হিসেবে চাপালিশ বৃক্ষের আবাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা। এর কাঠ যেমন মূল্যবান, তেমনি এর ফল বন্যপ্রাণী ও মানুষের খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।’

মেহেরুন্নেসা মনে করেন, জলবায়ু সংকটে থাকা এই পৃথিবীকে আবাসযোগ্য রাখতে বৃক্ষনিধন দমনের পাশাপাশি ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচী হাতে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে চাপালিশের চাষ একটি চমকে দেয়ার মতো বিষয় হতে পারে।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, সারাদেশে যেসব এলাকায় চাপালিশ গাছ জন্মে, তার মধ্যে কুমিল্লার লালমাই পাহাড় অন্যতম। বিলুপ্তপ্রায় এই গাছটির কাঠ ও ফল মূল্যবান। পাখি ও বনের পশুর জন্যও চাপালিশ উন্নত খাবার। এই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি আসবাব বছরের পর বছর টিকে থাকে। এই গাছ রক্ষায় বন বিভাগের জরুরী উদ্যোগ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

কুমিল্লা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা কোটবাড়িতে উদ্ভিদ উদ্যান করেছি। সেখানে চাপালিশের বীজ থেকে চারা করে গাছের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যে কেউ চাইলে আমরা বীজ কিংবা চারা দিয়ে সহযোগীতা করবো।’

এ বিভাগের আরো খবর