পদ্মা সেতু চালুর প্রভাব পড়েছে পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটে চলাচলরত লঞ্চগুলোতে। গত রোববার পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দুদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পায়নি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
যাত্রী ধরে রাখতে কমানো হয়েছে ভাড়া। এর পরও পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে রুটে লঞ্চের সংখ্যা কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই সড়কপথ ব্যবহার করছে। তাই কয়েক দিন পর আবার আগের মতোই যাত্রী পাবে বলে আশা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের। লঞ্চের সুপারভাইজার, মাস্টার ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পটুয়াখালী লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতো যাত্রীদের চাপ নেই, নেই হই-হুল্লোড়ও। কিছুক্ষণ পরপর দু-একজন যাত্রী এলে স্টাফরা কম দামের টিকিটের হাঁকডাক দিয়ে তাদের লঞ্চে ওঠানোর চেষ্টা করছেন।
দুদিন আগেও যেখানে চারটি ডাবল ডেকারের দোতলা ও তিনতলা লঞ্চ ছিল, সেখানে মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে মাত্র দুটি লঞ্চ চোখে পড়ে। এর মধ্যে একটি দোতলা, আরেকটি তিনতলা লঞ্চ।
তিন তলাবিশিষ্ট সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের পটুয়াখালী ঘাটের কেবিন ইনচার্জ মো. জাফর মিয়া জানান, তাদের লঞ্চে প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য সিঙ্গেল, ডাবল, ফ্যামিলি, ভিআইপিসহ মোট কেবিনের সংখ্যা ১২৯টি। এর মধ্যে বিকেল সোয়া ৫টার মধ্যে ৯২টি কেবিন বুকিং হয়েছে। বাকি কেবিন খালি। এ ছাড়া ওই সময় পর্যন্ত নিচতলা আর দোতলার ডেকে সাধারণ যাত্রী উঠেছেন সর্বমোট ২০০ থেকে ২৫০ জন।
জাফর মিয়া বলেন, ‘বছরের প্রায় সময়, এমনকি দুদিন আগেও আমাদের লঞ্চের কেবিন এক দিন আগেই প্রায় সব অগ্রিম বুকিং থাকে। সেখানে আজকে এই অবস্থা।
‘যাত্রীদের কথা ভেবে আমরা সাধারণ যাত্রীদের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করেছি মাত্র ৩০০ টাকা। আর কেবিন ভাড়া সিঙ্গেল ১ হাজার ২০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২ হাজার ২০০ টাকা। এ ছাড়া ভিআইপি কেবিন (বাথরুম সংযুক্ত) ৫ হাজার টাকা সেটিও আগের চেয়ে কমিয়েছি।’
লঞ্চের ইনচার্জ মো. ইউনুস মিয়া জানান, গত সোমবারও তারা ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কেবিনে যাত্রী নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া সদরঘাট আর ফতুল্লা ঘাট থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০-৩০০ যাত্রী ছিলেন ডেকে।
তিনি বলেন, ‘লঞ্চের এই কম যাত্রীর উপস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। আশা করি আগের মতোই যাত্রী পাব আমরা। এখন হয়তো অনেকেই নতুন সেতু দেখতে গাড়িতে করে ঢাকা যাচ্ছে বা পটুয়াখালী আসছে।’
ঘাটে অপেক্ষমাণ আওলাদ-৭ লঞ্চের পটুয়াখালী ঘাটের ইনচার্জ আব্দুল আজিজ জানান, তার লঞ্চে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪৫টির মতো কেবিন বুকিং হয়েছে। নিচতলা আর দোতলার ডেকে সাধারণ যাত্রী উঠেছেন ১৫০ থেকে ২০০ জন।
লঞ্চের ভাড়া নিচ্ছেন সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা আর সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকা। ডাবল কেবিন ভাড়া ২ হাজার টাকা।
আজিজ বলেন, ‘কোরবানি ঈদের আগেই আশা করি যাত্রীসংখ্যা আগের মতো পাব আমরা। কারণ ঢাকার অনেক যাত্রীই মালামাল নিয়ে বাসে আসতে পারবেন না।’
আওলাদ-৭ লঞ্চের ডেকের যাত্রী সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘তিন দিন আগে ছুটিতে গ্রামের বাড়ি মৌকরণ এলাকায় আসছিলাম। এখন লঞ্চে যাচ্ছি, কারণ সঙ্গে দুটি বড় ব্যাগ। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র ৩০০ টাকায় লঞ্চে শুইয়ে শুইয়ে দুজন চলে যাব।
‘কিন্তু বাসে গেলে তো দুজনের জন্য দুটি টিকিট আবার ব্যাগের জন্যও টাকা দিতে হতো।’
লঞ্চের কেবিনের যাত্রী আবু মিয়া বলেন, ‘একবার ইচ্ছে ছিল বাসে যাই। কিন্তু চিন্তা করলাম ৬-৭ ঘণ্টা বাসে বসে থাকা কষ্টকর, এর চেয়ে বরং কেবিনে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যাই।’
ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৫ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন ঢাকা-পটুয়াখালী নৌরুটে দোতলা আর তিন তলাবিশিষ্ট মোট চারটি লঞ্চ চলাচল করত। এসব লঞ্চের কেবিনের চাহিদা ছিল সোনার হরিণের মতো। ডেকে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি যাত্রী নিয়ে প্রতিনিয়তই আসা-যাওয়া করত লঞ্চগুলো।