ঘনিয়ে আসছে কোরবানি ঈদ। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে হাটে পশু কেনাবেচার।
গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হাটে বাড়তি দামে কোরবানির পশু বিক্রি করতে হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
তারা জানান, কোরবানি সামনে রেখে রোজার ঈদের পরপরই বাজারে বাড়তে শুরু করেছে ভুসি, খইল ও কুঁড়ার দাম। ফলে কোরবানির পশু মোটাতাজা করতে তাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে।
খুলনার শাহপুর গ্রামের খামারি আরাফাত হোসেন বলেন, ‘৪ মাস আগেও বাজারে ভুসি, খইল ও কুঁড়ার দাম সহনীয় পর্যায়ে ছিল। তবে রোজার ঈদের পরপরই ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদের এখন বাড়তি খরচ হচ্ছে।
‘৪ মাস আগে ৪০ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে এক বস্তা ভুসির দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ৪০ কেজির বস্তার খইলে ৬০০ টাকা ও কুঁড়ায় ২০০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘যার কারণে প্রত্যেক খামারিকে এখন বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। যার প্রভাব কোরবানির বাজারে পড়বে।’
একই এলাকার কেরামত আলী নামের আরেক খামারি বলেন, ‘গত বছর তিন মণ ওজনের প্রতিটি গরু আমরা বিক্রি করেছিলাম ৫৫ হাজার টাকার আশপাশে। এবার সেই গরুর দাম হবে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকার আশপাশে।
‘বাজারে সব থেকে ৩ থেকে ৪ মণ ওজনের গরুর চাহিদা বেশি থাকে। খামারিরা ব্যবসায়ের জন্য এই ধরনের গরু হাটে তুলতে বেশি নজর দেন।’
এই খামারি আরও বলেন, ‘গরুর খাদ্যের দাম যেহেতু বেড়েছে, তাই আমরাও একটু বাড়তি দাম বাজারে হাঁকব। এটা ছাড়া উপায় নেই।’
পশুর ঘাটতি নেই খুলনা বিভাগে
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন খামার ও ব্যক্তি পর্যায়ে ৮ লাখের বেশি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন।
তিনি জানান, খুলনা বিভাগে এবার ৮ লাখ ৭৯ হাজার ২৫১টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যার মধ্যে খুলনা জেলায় ৩৩ হাজার ৬০০টি, সাতক্ষীরায় ৫২ হাজার ৬২৯টি, যশোরে ৫৩ হাজার ৬৯৬টি, বাগেরহাটে ৩৫ হাজার ৮৪৮টি, ঝিনাইদহে ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৪১টি, মাগুরায় ৩১ হাজার ৯৯৭টি, কুষ্টিয়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৭১টি, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২১৮টি, নড়াইলে ২৮ হাজার ৬৬৩টি, মেহেরপুরে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৬টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন বলেন, ‘খুলনা বিভাগে কোরবানির পশুর যে চাহিদা রয়েছে তাতে প্রস্তুতকৃত পশু দিয়ে হয়ে যাবে। চাহিদার তুলনায় স্থানীয় খামারগুলোতে গরু বেশি থাকায় এবার অন্য কোথাও থেকে খুলনা বিভাগে পশু আনতে হবে না।’
খুলনায় পশুর হাট শুরু ৪ জুলাই
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ব্যবস্থাপনায় নগরীর জোড়াগেট এলাকায় আগামী ৪ জুলাই শুরু হচ্ছে কোরবানির পশুর হাট। কেসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপনকে আহ্বায়ক করে হাট পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি জানান, কোরবানির পশুর হাট ইজারার জন্য পরপর তিনবার দরপত্র আহ্বান করেছিল কেসিসি। একবারও কেউ সাড়া দেয়নি। ফলে এবারও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পশুর হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেসিসি।
১১ বছর ধরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনা করছে কেসিসি। এ বছর হাটের ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৫ হাজার ২ টাকা।
শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও হাটে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
‘পশুর হাট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক টিম প্রস্তুত রাখা, পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখা, ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, জাল টাকা শনাক্তকরণের জন্য ব্যবস্থা রাখা, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক শেড নির্মাণ করা হবে।’
স্বপন বলেন, ‘হাটে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া পশু আনতে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকও করা হবে।
‘২০২১ সালে কেসিসির পশুর হাটে ৫ হাজার ২৮০টি গরু, ১ হাজার ৬৩৯টি ছাগল ও ২১টি ভেড়া বিক্রি হয়েছিল। এ থেকে কেসিসির রাজস্ব আয় হয়েছিল ২ কোটি ৪৩ হাজার ৪৫ টাকা।’