নড়াইলের সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ব্যাপক সহিংসতা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ফেসবুকে পোস্ট দেয়া শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায় এখন কারাগারে আছেন।
তবে মামলার বাদী বলছেন, রাহুল ফেসবুকে কী পোস্ট দিয়েছেন তা তিনি দেখেননি। পুলিশের অনুরোধে তিনি মামলার বাদী হয়েছেন, এমনকি এজাহারও লিখে দিয়েছে পুলিশ। তিনি শুধু সই করেছেন। ঘটনার পরদিন ১৯ জুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি হলেও ২০ জুন পুলিশ বাদীর বাড়ি গিয়ে এজাহার ‘সংশোধন’ করে আবার তার সই নিয়েছেন।
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাস ১৮ জুন আকস্মিকভাবে উত্তাল হয়ে ওঠে। একদল শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, আগের দিন একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে পোস্ট দিয়েছেন।
বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আশপাশের এলাকার হাজারও মানুষ ক্যাম্পাসে জড়ো হয়। স্বপন কুমার সাহায্য চান স্থানীয় থানার।
একপর্যায়ে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। বিক্ষুব্ধরা স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ কলেজের আরও দুই হিন্দু শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে দেশব্যাপী। অলংকরণ: মামুন হোসাইন/নিউজবাংলাপুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্ত হওয়ার ঘটনায় তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাহুল দেবের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। তবে কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় ৯ দিন পর মামলা করেছে পুলিশ। এই সময়ের মধ্যে পুলিশের দাবি ছিল, স্বপন কুমারকে জুতার মালা পরানোর ঘটনা তারা ‘দেখেনি’। ভাইরাল ভিডিওটিও তাদের চোখে পড়েনি। এরই মধ্যে স্বপন কুমারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার তোড়জোড় শুরু করে কলেজ পরিচালনা কমিটি।
স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের সামনে জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেবিষয়টি নিয়ে রোববার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজবাংলা।
আরও পড়ুন: পুলিশের সামনে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা কীভাবে?
শিক্ষক স্বপন কুমারকে নিয়ে নিউজবাংলার প্রতিবেদনটি নজরে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সোমবার নিউজবাংলাকে জানান, স্বপন কুমারকে তার চলতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ এমন চেষ্টা করলেও মাউশি তাতে অনুমোদন দেবে না।
স্বপন কুমার ইস্যুতে সমালোচনার মুখে পড়া নড়াইলের প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা: ঘুম ভাঙল প্রশাসনের, হারাচ্ছেন না পদ
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় সোমবার দুপুরে নড়াইল সদর থানায় মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিন। রোববার রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। বিষয়টি নিউজবাংলাকে মঙ্গলবার নিশ্চিত করেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় এবং সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর।
কলেজে সহিংসতার পরদিন ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়া শিক্ষার্থী রাহুল দেব শর্মার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় রাহুল এখন কারাগারে।
রাহুলের বিরুদ্ধে মামলার বাদী যা বলছেন
শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়ের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার বাদী মির্জাপুর হাজীবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলছেন, এজাহারে কী আছে সেটি তার জানা নেই। তিনি রাহুলের ফেসবুক পোস্টও দেখেননি। সহিংসতার পরদিন পুলিশ তাকে থানায় ডেকে নিয়ে তাদের লেখা এজাহারে সই করিয়ে নিয়েছে।
ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরের দিন দুপুরের দিকে ওসি সাহেব আমারে ফোন দিছেন যে, মামলার একজন বাদী হতে হবি, একজন বাদী বের করেন। কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করলাম, কেউ যাতি রাজি না।
‘আমি (ওসিকে) বললাম, মাগরিবের পরে আলোচনা করে কিডা যাবে আমি জানাচ্ছি আপনাদের। সে বলল, না, দেরি হয়ে যাবে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হবে। তাহলে একটা কাজ করেন, আপনি নিজেই বাদী হন। আমরা গাড়িতে করে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি, আবার দিয়ে যাব।’
ফারুক হোসেন বলেন, ‘পরে ওসি সাহেবের গাড়িতে করে গেলাম নড়াইল। নড়াইল গেলে ওসি সাহেব সব লিখে-টিখে সব কমপ্লিট করার পর আমি বললাম যে, আমার তো আবার মিটিং আছে, একটু তাড়াতাড়ি যাতি হবে।
‘তখন কলো (বলল), ঠিক আছে, কমপ্লেইন নিয়ে আমি এসপির কাছে যাব। ওখানে ডিআইজির সঙ্গে ফোন করে এডা আলোচনা করে আপনার স্বাক্ষর নেব। আপনার একটু দেরি করে যাতি হবে। তখন আমি ওখানে মাগরিবের নামাজ পড়লাম।’
এর পরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওসি সাহেব এরপর যাইয়ে এসপির সঙ্গে আলোচনা করে। ওইটা দেখাদেখি করার পর আমার কাছ থেকে একটা স্বাক্ষর নিল কেসে। যা লেখার উনারা লিখেছেন, আমি কিছু লেখিনি। আমি বলিওনি।
‘আমাক পড়ে শোনাল যে, এই ঘটনা। দেখলাম ওখানে যা হইছে, তাই। আমি যতদূর জানি সব সঠিক। সেইভাবে আমি স্বাক্ষর করি আসলাম।’
মামলা হয়ে যাওয়ার পর এজাহারের কপি পরিবর্তনের অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ফারুক হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, পরদিন পুলিশ তার বাসায় এসে জানায় এজাহারে কিছু সংশোধন করা হয়েছে। এরপর সেই ‘সংশোধিত’ কপিতে আগের দিনের তারিখেই ফারুক হোসেনের সই নেয়া হয়।
শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়ের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারের মূল ও সংশোধিত কপিএজাহারের প্রথম দিনের এবং পরদিনের দুটি কপিই পেয়েছে নিউজবাংলা। ফারুক হোসেনকে পুলিশ বলেছিল এজাহারের নতুন কপিতে কিছু বানান সংশোধন করা হয়েছে। তবে নিউজবাংলা দেখেছে, দুটি কপির মধ্যে ‘উক্ত সময়ে পুলিশ আইন শৃংখলা রক্ষার্থে ০৬ রাউন্ড গ্যাস গান ফায়ার করে‘- এই বাক্যটির হেরফের রয়েছে। একটি কপিতে বাক্যটি থাকলেও আরেকটিতে নেই।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
আর পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়ের দাবি, মামলার এজাহার পরিবর্তনের বিষয়টি তার জানা নেই। রাহুলের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার লিখে ফারুক হোসেনের সই নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘জোর করে কাউকে তো বাদী বানানোর কথা নয়। ওই প্রসঙ্গটা আমার জানা নেই, থানায় যখন মামলা হয়েছে ওসি সাহেব জানেন। আমি তো এই ব্যাপারটা জানি না। যদি কেউ মামলা না করতে চায়, যদি কোনো বাদী না পাওয়া যায় তখন তো একভাবে না একভাবে মামলা করতেই হবে। উনি যদি মামলা করতে না যেত, তাহলে কি আমরা মামলা করতে পারতাম? যদিও এটা আমার জানা নেই।’
পুলিশ সুপার অবশ্য অভিযোগ অনুসন্ধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যেহেতু বলেছেন, আমি খোঁজ নেব জিনিসটা কী হয়েছিল। যদি কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাদী মামলার একটা বড় অনুষঙ্গ। মামলা করতে গেলে বাদী লাগবেই। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আমরা সুয়োমোটো মামলা নেই, যেটাতে পুলিশই বাদী হয়।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার বাদী (ফারুক হোসেন) যেটা বলেছেন, সেটা ওনার ব্যক্তিগত মতামত। মামলার বিষয়টি লোকচক্ষুর আড়ালে হয় না। সাক্ষীসাবুদ নিয়েই এজাহার করা হয়। বাদী এখন বলছেন যে তাকে বাদী বানানো হয়েছে, তিনি কিছু জানেন না। তিনি এটা বলতে পারেন। এটা যদি আমাদের কাছে আসে তাহলে আমরা তদন্তসাপেক্ষে দেখব।’
কোনো ব্যক্তির করা মামলার এজাহার পরে সংশোধন বা পরিবর্তন করার সুযোগ পুলিশের নেই বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ বাদী হয়ে কোনো মামলা করলে পরে পুলিশ চাইলে সেটি পরিবর্তন করতে পারে। তবে কোনো সাধারণ মানুষ বাদী হয়ে এজাহার তৈরির পর মামলা দায়ের হয়ে গেলে, তা আর পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এটি পরিবর্তন করা হলে তার আইনগত কোনো ভিত্তিও নেই।’
শিক্ষক হেনস্তার ৯ দিন পর মামলা
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে সহিংসতা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ঘটনার ৯ দিন পর সোমবার এ-সংক্রান্ত মামলা করেছে পুলিশ।
দণ্ডবিধির ৩৪, ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪১, ৩৩২, ৩৫৩, ৩৫৫, ৪৩৬, ৪২৭, ৫০০ ধারায় করা এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের সামনে জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেএরপর রোববার রাতেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে আছেন কলেজের পাশের মির্জাপুর বাজারে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাওন খান। লাল গেঞ্জি পরা ৩০ বছর বয়সী শাওনকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরানোর ভিডিওতে চিহ্নিত করা গেছে।
শাওনের মা হোসনেয়ারা বেগম মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল রাতে আমার ছেলেকে দেখা করতে বলে মির্জাপুর ক্যাম্প পুলিশ। দেখা করতে গেলে তাকে আটকায় দিছে।’
হোসনেয়ারা বেগম দাবি করেন, তার ছেলে ঘটনার দিন শিক্ষক বা অভিযুক্ত ছাত্রকে বিক্ষুব্ধ লোকজনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। এর পরেও ‘বিনা কারণে’ পুলিশ তাকে নিয়ে গেছে। তবে স্বপন কুমারকে জুতা পরানোর ভিডিওতে শাওনকে শনাক্ত করেন হোসনেয়ারা।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আরও দুজন হলেন মির্জাপুর মধ্যপাড়া মো. মনিরুল ইসলাম এবং মির্জাপুরের সৈয়দ রিমন আলী।
কী আছে মামলার ধারায়
কলেজে হামলা ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনায় সোমবার দুপুরে নড়াইল সদর থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক ও মির্জাপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোরছালিনের করা মামলায় দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘যখন কিছু ব্যক্তি মিলে সবার একই অভিপ্রায় পূরণের জন্য কোনো অপরাধমূলক কাজ করেন তখন ওইসব ব্যক্তির প্রত্যেকেই ওই কাজের জন্য এভাবে দায়ী হবেন যেন কাজটি ওই ব্যক্তি এককভাবে করেছেন।’
মামলায় ১৪৩ ধারাও দিয়েছে পুলিশ। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বেআইনি সমাবেশের সদস্য হবেন তিনি যেকোনো বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের সামনে জুতার মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে৩২৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি ধারা৩৩৪ এ ব্যবস্থিত ক্ষেত্র ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করলে তিনি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে- যার পরিমাণ এক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
দণ্ডবিধির ৩৪১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কেউ কোনো ব্যক্তিকে অবৈধভাবে বাধাদান করলে তিনি বিনাশ্রম কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ এক মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে- যার পরিমাণ পাঁচশ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
৩৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য পালনে বাধাদান করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করলে যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
৩৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্তব্য পালনে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আক্রমণ বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করলে যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে অথবা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
৩৫৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মারাত্মক প্ররোচনা ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে অপমান করার জন্য আক্রমণ বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করলে যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে অথবা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
৪২৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি অনিষ্ট সাধন করে এবং তার মাধ্যমে ৫০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি লোকসান বা ক্ষতি করলে সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
৪৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘গৃহ ইত্যাদি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে অনিষ্ট সাধন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে-দণ্ডিত হবেন, এর সঙ্গে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’
৪৪৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ করলে তিনি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ তিন মাস পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে যার পরিমাণ পাঁচশ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
৪৪৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি অনধিকার গৃহপ্রবেশ করলে তিনি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ডে যার পরিমাণ এক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
৫০০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি কারও মানহানি করলে তিনি বিনাশ্রম কারাদণ্ডে- যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত হতে পারে বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে দেশব্যাপী। অলংকরণ: মামুন হোসাইন/নিউজবাংলাআগের অবস্থান থেকে সরেছে প্রশাসন
শিক্ষক স্বপন কুমারকে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হলেও পুলিশ সপ্তাহখানেক পরেও দাবি করেছিল, তারা এ সম্পর্কে কিছু জানে না।
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যক্ষকে যখন কলেজের কক্ষ থেকে বের করে আনা হয়, তখন সেখানে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। এ ছাড়া নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তখন কেউ তাকে জুতার মালা দিয়েছে কি না, আমরা দেখতে পারি নাই। এটা আমার জানাও নেই।’
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমি এখনও কোনো ভিডিও দেখি নাই। জুতার মালার ব্যাপারটাও জানি না। এ ঘটনায় আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তারা প্রতিবেদন দিলে যে বা যারা দোষী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে পুলিশ সুপার মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ঘটনার দিন তিনি বেশ খানিকটা দূরে অবস্থান করছিলেন। এ কারণে স্বপন কুমারকে জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার ঘটনা তার চোখে পড়েনি।
তিনি বলেন, ‘ওইদিন চারিদিক থেকে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা ছিল। তাদের নিবৃত্ত করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। ওখানে স্বয়ং ডিসি সাহেব ছিলেন, আমি ছিলাম। আমরা সর্বদা চেষ্টা করেছি, যতটুকু কম বলপ্রয়োগ করে রক্তপাতহীনভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, সেইভাবে আমরা চেষ্টা করেছি।
‘ডিসি সাহেব, আমরা অনেক বুঝিয়েছি লোকদের। ডিসি সাহেব এবং আমরা চেয়েছিলাম তাদের (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত ছাত্র) দ্রুত গাড়িতে তুলে রেসকিউ করতে। আমরা চেষ্টা করেছি সেইভাবে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ঠান্ডা করার জন্য, কথা বলার জন্য আমি এবং ডিসি সাহেব মেইন যে রাস্তা… ওই জায়গায় ছিলাম।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘যখন ওখান থেকে (কলেজ) তাদেরকে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত ছাত্র) নামায়, আমি আর ডিসি সাহেব ছিলাম অন্য জায়গায়। মেইনে যে রাস্তা, যেখানে টার্ন করবে ওই জায়গাতে আমরা। আমাদের মুখটা ছিল উল্টোদিকে, জনগণকে আমরা বুঝাচ্ছিলাম, ওইটা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
‘এদিকে তারা টান দিয়ে নিয়ে যেয়ে গাড়িতে তুলবে সেই সময় হয়তো হঠাৎ করে এই কাজটা হয়তো হয়ে গেছে। এটাতে কিন্তু আমাদের নিজেদের কোনো ইয়ে ছিল না যে এ রকম হতে পারে। হওয়ার পরপর, কিছুক্ষণ পর হয়তো যখন তাদেরকে গাড়িতে তুলেছি হুড়োহুড়ির ভেতরে, তখন তার কিন্তু গলায় এটা দেখি নাই। একটু পরে যখন গাড়িতে তুলেছি হুড়োহুড়ির ভেতরে কেউ হয়তো খুলে ফেলে দিছে। ওই সময় তাদের নিয়ে মুভ করানোর সময় হয়তো কাজটা হয়ে গেছে।’