পদ্মা সেতুতে উঠতে পারবে না মোটরসাইকেল- সরকারের এমন ঘোষণার পরও কৌশলে সেতু পাড়ি দিচ্ছেন বাইকাররা। সোমবার সকাল থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেখা গেছে মোটরসাইকেল তুলে নিয়ে সেতু পার করে দিচ্ছে বিভিন্ন পিকআপ ভ্যান। মঙ্গলবার ত্রিপল দিয়ে ঢেকে পিকআপে পার করা হচ্ছে বাইক।
সেতুর দুই প্রান্তে এই পিকআপচালকদের এখন রমরমা ব্যবসা। সেতু পার করে দিতে বাইকপ্রতি রাখা হচ্ছে ১০০০ টাকা, যেখানে বাইকের টোল কেবল ১০০ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, শর্তসাপেক্ষে পিকআপে পণ্য হিসেবে বাইক পরিবহন করতে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাইকগুলো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে নিতে বলা হচ্ছে। তা নাহলে বাইকাররা বাইকে বসে পিকআপে ভ্রমণের মাঝপথে সেতুতে নেমে যেতে পারে।
যান চলাচল শুরুর প্রথম দিন রোববার মোটরসাইকেলের ঢল, অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ও দুর্ঘটনায় দুই বাইকআরোহীর মৃত্যুর পর সোমবার সকাল থেকে পদ্মা সেতুতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।
পদ্মা পাড়ি দিতে বাইকারদের এখন বিকল্প পথ শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌপথ। মোটরসাইকেলের চাপের মুখে সোমবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে মাঝিরকান্দির উদ্দেশে একটি ফেরি ছেড়ে যায়। মঙ্গলবার সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর মঙ্গলবার বাইকাররা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে পিকআপে সেতু পাড়ি দিয়েছেন। এ জন্য তাদের গুনতে হয়েছে ১০০০ টাকা করে।
ঢাকা থেকে জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় এসেছেন নড়াইলের রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘বাবা খুবই অসুস্থ, তাই আমাকে বাড়ি যেতেই হবে। তাই মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিলাম তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু টোল প্লাজা পার হতে পারলাম না। তাই পিকআপে পার হতে হচ্ছে, ১ হাজার টাকা নিবে।’
সাতক্ষীরা থেকে সোমবার ঢাকায় এসেছেন আব্দুল বাতেন। আসার সময় পিকআপে করে মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়েছেন ৮০০ টাকা দিয়ে। ফিরতি পথে পিকআপে করে মঙ্গলবার তাকে সেতু পার হতে হবে ১ হাজার টাকায়। তাও ত্রিপলের ভেতরে করে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এভাবে যাওয়া যায়? পিকআপে করে মোটরসাইকেল যাচ্ছে। তাহলে মোটরসাইকেলে করে যেতে পারব না কেন? ১০০ টাকা টোল দিয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু এখন ৯০০ টাকা বেশি দিয়ে ১ হাজার টাকা যেতে হচ্ছে।’
ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি মো. হাফিজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাড়ি মাদারিপুর। মোটরসাইকেলে করে বাড়ি যাব, কিন্তু যেতে পারিনি। পিকআপে মোটরসাইকেল উঠিয়ে ১ হাজার টাকা চাচ্ছে। আমার পক্ষে এই টাকা দেয়া সম্ভব নয়।
‘অন্য বাইকারদের দোষ আমাদের ওপর নেব কেন? যারা অপরাধ করছে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু সব বাইকারদের যদি পদ্মা সেতুতে উঠতে না দেয়া হয়, তাহলে সেতুর সার্থকতা কীভাবে পাবে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ?’
পিকআপ চালক মোহাম্মদ শাজাহান মিয়া জানালেন, সকাল থেকে মোটরসাইকেল বহন করে তিন বার সেতু পাড়ি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘২টি মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারি। সকাল থেকে ৩টা ট্রিপ মেরেছি। প্রতিটি মোটরসাইকেল ১ হাজার টাকা করে। গতকাল টোলসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ৪ হাজার ৭০০ টাকা টিকছে।’
আরেক পিকআপ চালক মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘সব সময় তো ব্যবসা করা যায় না। গতকাল পিকআপ লইয়া তিনবার গেছি আইসি, আজ গেছি একবার আসছি একবার। ভাড়া ১০০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
‘পিকআপে করে দুইটি হোন্ডা নিতে পারি। টোল ভাড়া আসতে যাইতে ২ হাজার ৪০০ টাকা। ৪ হাজার টাকা ইনকাম, খরচ বাদে কিছু টাকা থাকে। গতকাল হোন্ডা বেশি ছিল আর আয়ও ভালো হইছে।’
ঢাকার মিনি ট্রাকচালক আরমান মিয়া বলেন, ‘৮টা হোন্ডা নিতে পারি। আমার ট্রাকের টোল ভাড়া ১ হাজার ৬০০ টাকা, আইতে যাইতে খরচ ৩ হাজার ২০০ টাকা। সকালে একবার গেছি আইছি, এখন আবার যাওয়ার জন্য ট্রাক ভরতাছি; লাভটা ভালই।’
আরেক মিনি ট্রাকচালক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘গতকাল ২টা ট্রিপ মারছি, আজ একটা মারছি। এখন ওপারে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল উঠাইতেছি, তবে আজকে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কম। গতকাল দাঁড়াইতে হয় নাই, সঙ্গে সঙ্গে ভইরা গেছে। আজ ৮০০ টাকা করে এখন মোটরসাইকেল ওঠাইতাছি।’
বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞার কারণে টোল প্লাজায় আজ মোটরসাইকেলের সংখ্যা খুবই কম।’
পিকআপে করে মোটরসাইকেল পার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু মোটরসাইকেল পিকআপে করে পণ্য হিসেবে পদ্মা সেতু দিয়ে পার হচ্ছে। তবে সেসব পিকআপকে মোটরসাইকেলে ঢেকে পার হতে হচ্ছে।
‘আবার কিছু কিছু পিকআপ ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা মোটরসাইকেলের ওপরে বসে যাচ্ছে, তাদেরকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কারণ তারা নেমে ছবি তুলতে পারে। নিরাপত্তারজনিত কারণে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।’