ঢাকার সাভারে কলেজশিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের আয়োজনে মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎপল কুমার সরকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ ও ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। পাশাপাশি সমাজ পরিবর্তনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
৪১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফণী ভূষণ বিশ্বাস বলেন, ‘উৎপল আমার খুব কাছের বন্ধু। ও যে রুমে থাকত সেখানে আমিও দুই রাত ছিলাম। পরশু দিন অভিযুক্ত ছেলেটা একাই এসে তাকে ব্যাট ও স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে।
নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। ছবি: সংগৃহীত
‘যতদূর জানি আঘাতটা উৎপলের মাথায় লাগে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে জানায়, উৎপলের পেট থেঁতলানো ছিল। তার অর্গানগুলোও বের হয়ে ছিল। এতে বোঝা যায়, এটা পরিকল্পিত হত্যা। যে ছাত্র এই ঘটনায় অভিযুক্ত, তিনি কলেজ মালিকের ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। শুধু হত্যাকারী নয়, কলেজের ম্যানেজিং কমিটি ও মালিকপক্ষকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
৪১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষকদের মাথার তাজ মনে করি। শিক্ষকশ্রেণি লাঞ্ছিত হলে আমরা তা মেনে নিতে পারি না। উৎপল ৪১তম ব্যাচের আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দীর্ঘ সাত বছর আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। আমাদের বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে ছাত্র এই কাজ করেছে আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, ‘আমদের শিক্ষকসমাজ বারবার নিগৃহীত হচ্ছে। শিক্ষকসমাজ লাঞ্ছিত হওয়া মানে দেশ, সমাজ লাঞ্ছিত হওয়া। আজকে যারা প্রশাসনে আছেন তাদেরও শিক্ষক এই শিক্ষকসমাজ।
‘আমরা কতটা নিচে নেমেছি সেখানে আমাদের শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন, নিগৃহীত হচ্ছেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। উৎপলকে যারা বর্বরোচিতভাবে হত্যা করেছে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আজকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। এ প্রতিবাদ শুধু শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর না। এ প্রতিবাদ দেশের সংবেদশীল মানুষের, বিবেকবান মানুষের, এ দেশকে যারা ভালোবাসে তাদের। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
‘শুধু অপরাধীকে, একজন খুনিকে ধরে আইনের আওতায় শাস্তি দিলেই যে অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পেয়ে যাব আমরা তা নয়। আমাদের সমাজেও সংস্কার জরুরি।’
অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সরকারের কাছে অনুরোধ করব উৎপল কুমার হত্যাকাণ্ডের যেন বিচার হয়। আর কেউ যেন এ পেশাকে কলুষিত না করে। শিক্ষককে যেন বাবার আসনে স্থান দেয়া হয়। অভিভাবকদের বলব, তারা তাদের সন্তানদের যেন নৈতিক শিক্ষা দেন।’
এর আগে গত শনিবার দুপুরে সাভারের হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা ছেলেদের ফুটবল ও মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। শনিবার স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। এ সময় প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল ছেলে শিক্ষার্থীরা।
‘অভিযুক্ত ছাত্রও দ্বিতীয় তলায় ছিল। হঠাৎ সে নেমে মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক উৎপলকে স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় উৎপলকে উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আজ (সোমবার) সকালে উৎপলের মৃত্যু হয়।’
অধ্যক্ষ জানান, উৎপলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামে। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন।