প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো কোন কোন ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতি গঠিত অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির কাছে প্রস্তাব করেছিল, তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তি। রিটে তথ্য কমিশন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে সার্চ কমিটিতে আসা ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়, তবে প্রস্তাবকারীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। পরে এই নাম থেকে ইসি গঠন করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলো কাদের নাম প্রস্তাব করেছে, তা জানতে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
সেদিন রাত ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। যাদের নাম জমা পড়ে তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিন জন উপদেষ্টা, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এম সাখাওয়াত হোসাইন ও ছহুল হোসাইনের নামও ছিল এতে। ছিল সেনাবাহিনীর সাবেক এক প্রধানের নামও।
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে নাম প্রস্তাব করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছে নাম চেয়েছিল সার্চ কমিটি। এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও নাম পাঠানোর সুযোগ ছিল।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাম পাঠানোর সুযোগ ছিল। পরে দুই দিন বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসা পরামর্শের ভিত্তিতে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবার নাম পাঠানোর সুযোগ দেয় হয়।
তবে যে কারণে এই বাড়তি সময় দেয়া হয়, সেটি সফল হয়নি। বিএনপি বর্ধিত সময়েও কোনো নাম প্রস্তাব করেনি।
এর আগেও দুটি নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটি গঠন করে করা হয়েছিল। এই কমিটি রাষ্ট্রপতিকে নাম সুপারিশ করার পর ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও ২০১৭ সালে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
সে সময় সার্চ কমিটির কাছে জমা পড়া কোনো নাম প্রকাশ করা না হলেও গত শনিবার বিশিষ্টজনরা সার্চ কমিটিকে এবার জমা পড়া নাম প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে আপিল বিভাগ অসাংবিধানিক ঘোষণার পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে আওয়ামী লীগ। তবে এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহতের ডাক দিয়ে আন্দোলনে নামে বিএনপি।
ব্যাপক প্রাণহানি ও সহিংস সেই ভোটের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশ নেয় দলীয় সরকারের অধীনেই। তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে- এমন একটি অভিযোগ তোলে তারা। এ কারণে দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে যেতে চাইছে না তারা।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা একটি মীমাংসিত ইস্যু। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন করতে নির্বাচন কমিশন আইনও করা হয়। আর এই আইনের আলোকেই গঠন করা হয় সার্চ কমিটি।