পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন গঠন করতে বলা হয়েছে। আর কমিশনকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৮ আগস্ট দিনও ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
গতকাল সোমবার শুনানির সময় ‘পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ’ বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে, তারা জাতির শত্রু, তাদের চিহ্নিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করে আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি এবং দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠন করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং দোষীদের কেন বিচারের মুখোমুখি করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। দীর্ঘদিনেও রুলের জবাব না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত।
মন্ত্রিপরিষদ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও যোগাযোগ সচিব এবং দুদকের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরপর ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি এবং দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত।
পাশাপাশি হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী এই কমিটি বা কমিশন গঠনের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়।
২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ইউনূসের বিচার দাবি: আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো এককাট্টা’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের কথা নজরে নিয়ে এ আদেশ দিয়েছিল বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
কাজ শেষে গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। পরের দিন যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেয়া হয়।
বিশ্বব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ওপর ভর করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।
সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। টানাপড়েনের মধ্যে সংস্থাটি অর্থায়ন স্থগিত করলে তদন্ত শুরু করে দুদক।
ওই তদন্ত পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান আইনজীবী ওকাম্পোর নেতৃত্বে ২০১২ সালে দুই দফায় বাংলাদেশে আসে তিন সদস্যের বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষক প্যানেল।
পর্যবেক্ষক দলের পরামর্শে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দুদকের করা মামলায় জেল খাটতে হয় সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে। পরে অবশ্য দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালতও বিশ্বব্যাংকের আনা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রমাণ পায়নি বলে জানায়।
২০১২ সালের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ‘পদ্মা সেতু করার জন্য দেশে আমাদের ১৬ কোটি মানুষ আছে, ৮০ লাখ প্রবাসী আছে। বাংলার মানুষ সারা জীবন কি অন্যের সাহায্যে চলবে? নিজের পায়ে দাঁড়াবে না? আত্মনির্ভরশীল হবে না? পদ্মা সেতু আমরা করবই।’
পদ্মা সেতুতে ঋণ দেয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসসহ বেশ কয়েকজনকে দায়ী করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময় ইউনূস সেই ষড়যন্ত্রে জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন।