পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাত্রীদের সঙ্গে উল্লাসের জোয়ারে ভাসছেন খুলনার ব্যবসায়ীরাও। কারণ আগের চেয়ে এখন স্বল্প সময়ে রাজধানী ঢাকায় পণ্য আনা-নেয়া করতে পারছেন তারা।
সময় কম লাগায় ট্রাক ভাড়াও বর্তমানে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
খুলনার সোনাডাঙ্গার ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকার পাইকারি কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী লিয়াকত মোল্লা বলেন, ‘আমাদের মোকাম থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা শাক-সবজি পাঠানো হয়। আগে সকাল ৬টার দিকে ট্রাকে করে কাঁচামাল পাঠালে কারওয়ান বাজারে পৌঁছাতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা বেজে যেত।
‘মূলত মাওয়া ঘাটে যানজটের জন্য ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হতো। ফলে সময়টাও বেশি লাগত।’
তিনি বলেন, ‘আজ সকালেও ট্রাকে করে কাঁচা কাঁঠাল, পুঁইশাক পাঠাইছি। সকাল ৯টার মধ্যে তারা পদ্মা পার হয়ে গেছে। মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাক খুলনা থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিল। সেখান থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগেছে ঢাকার মোকামে পৌঁছাতে।
‘ফলে খুলনা থেকে এখন ট্রাকে করে ঢাকায় পণ্য পাঠাতে মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগছে, আগে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগত।’
ব্যবসায়ী লিয়াকত মোল্লা আরও বলেন, ‘আগে একটি ট্রাক খুলনা থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠাতে আমরা ভাড়া দিতাম ১৫ হাজার টাকা। আজ দিয়েছি ১১ হাজার টাকা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে প্রতি ট্রিপে পণ্য পাঠাতে আমাদের ৪ হাজার টাকা সেভ হচ্ছে।
‘এখনও অনেক ট্রাক মালিক পরীক্ষামূলকভাবে দেখছেন যাতায়াতের সময় কেমন লাগে। আশা করছি, সামনে ট্রাক ভাড়া আরও ১ থেকে ২ হাজার টাকা কমবে।’
খুলনার কদমতলা ফল আড়তের সততা বাণিজ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকার রহমত আলী বলেন, ‘আগে ঢাকা থেকে এক ট্রাক ফল আনতে আমাদের ভাড়া দিতে হতো ২০ হাজার টাকা। সোমবার রাতে এক ট্রাক আনারস এনেছি ১৬ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে।
‘আবার ঢাকা থেকে মধ্যরাতে রওনা হয়েছে ফলভর্তি ট্রাক। আজ ভোরে খুলনায় ট্রাকটি এসে পৌঁছাইছে। আগে দুপুর ১২টা বেজে যেত পৌঁছাতে।’
সৈয়দ আহমেদ নামে আরেক ফল ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগে টাঙ্গাইল থেকে খুলনায় আনারস নিয়ে আসতাম আরিচা ফেরিঘাট হয়ে। তখন টাঙ্গাইল থেকে খুলনা আসতে ১২ ঘণ্টার মতো সময় লাগত। অথচ সোমবার রাতে আমরা মাত্র ৬ ঘণ্টায় আরিচা ঘাট হয়ে মালামাল নিয়ে এসেছি।
‘এখন ঘাটেও তেমন ভিড় নেই। আগে ঘাট এলাকায় পণ্যবাহী ট্রাকের দুই থেকে তিন কিলোমিটারের সিরিয়াল থাকত। এখন ঘাটে এসে সঙ্গে সঙ্গে ফেরি পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মাওয়ার দিক থেকেও কম সময় লাগছে আবার আরিচা ঘাটেও যানজট না থাকায় কম সময় লাগছে। এতে পণ্য পরিবহনের সময় ও খরচ কমে যাচ্ছে।’
ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে ট্রাকভর্তি আনারস আনা ড্রাইভার সর্দার হোসেন আলী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে খুলনায় পণ্য আনা-নেওয়ায় সময় অনেক কম লাগছে, তাই পরিবহনে ভাড়া কমিয়ে দিয়েছি।
‘তবে ট্রাক মালিক পরীক্ষা করে দেখতে বলেছেন, সময় কেমন লাগে। এই হিসাবে তিনি হয়তো পরে ভাড়া আরও কমিয়ে দেবেন। এ ছাড়া আগে পণ্য নিয়ে আমরা ৪০-৫০ কিলিমিটার গতিবেগে ট্রাক চালাতাম। কিন্তু পদ্মা সেতুর আশপাশের সড়ক দিয়ে পণ্যভর্তি ট্রাক এখন ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চালানো সম্ভব হচ্ছে। বলা যায়, আগের থেকে অর্ধেক সময়ে এখন আমরা ঢাকা থেকে খুলনায় আসতে পারব।’
খুলনার কদমতলা এলাকায় কয়েকজন ট্রাকচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত মাঝারি আকারের ১৩ টনের ট্রাকে ১৮ থেকে ২০ টনের মতো পণ্য পরিবহন করা যায়। এ ছাড়া ছোট আট টনের ট্রাকে ১২ থেকে ১৩ টন পণ্য পরিবহন করা হয়।
মাঝারি আকারের ট্রাকে ১৮ থেকে ২০ টন পণ্য খুলনা থেকে ঢাকাতে নিতে তারা পরিবহন খরচ নিতেন ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছোট ট্রাকে নিতেন ১৩ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সময় কম লাগায় ভাড়া বর্তমানে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্রাক প্রতি কমানো হয়েছে। অনেক ট্রাক মালিক পরীক্ষামূলকভাবে দেখছেন। তারা হয়তো পরে ভাড়া আরও কমাতে পারেন বলে জানিয়েছেন ট্রাক চালকরা।
এর আগে গত রোববার ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় পদ্মা সেতু। আগের দিন শনিবার দুপুর ১২টার একটু আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন। এরপর রাত থেকেই সেতু পাড়ি দিতে দুই প্রান্তে গাড়ি নিয়ে ছুটে আসেন অনেকে।