বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্রামটিতে শান্তি আনল এক পাঠাগার

  •    
  • ২৮ জুন, ২০২২ ০৮:৪৮

সপ্তাহের সাত দিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে পাঠাগারটি। রবীন্দ্র রচনাবলিসহ পাঠাগারে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সাময়িকীসহ দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার বই।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রাম। কিছুদিন আগেও এই গ্রামের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা সারা দিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকত। এলোমেলো ঘুরে বেড়াত কিশোরের দল। তাদের অপ্রীতিকর নানা কর্মকাণ্ডে গ্রামের শান্তি নষ্ট হতো।

এই গ্রামেই বাংলা নাটকের গৌড়জন সেলিম আল দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি পাঠাগার। আর এই পাঠাগারের এমনই শক্তি যে কিছুদিনের মধ্যেই পাল্টে দিয়েছে পুরো গ্রামের দৃশ্যপট।

যে কিশোররা নানা অনিষ্ট করে বেড়াত, তারা এখন সুযোগ পেলেই ঢুঁ মারে ওই পাঠাগারে। ডুব দেয় দেশ-বিদেশের নানা গল্পের ভুবনে। পড়ে পত্রিকা। ক্যারম খেলতে খেলতে জমে ওঠে তাদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা।

এ গ্রামেরই স্কুলছাত্রী সুমাইয়া শিমু বলে, ‘যখন ক্লাস থাকে না তখনই আমরা এই পাঠাগারে চলে আসি। এখানে এসে গল্পের বই পড়ি। খুব ভালো লাগে। আগে তো অবসরে শুধু টিভি দেখতাম। তবে এখন এখানে বই পড়ে অনেক আনন্দ পাই।’

স্কুলছাত্র কুশল বলে, ‘আগে স্কুল থেকে এসে মোবাইলে গেমস খেলতাম। কিন্তু এখন পাঠাগারে এসে বই পড়ি, ক্যারম খেলি আর টিভি দেখি। খুব ভালো লাগে। এখন আর মোবাইল গেমস খেলতে তেমন ভালো লাগে না।’

পাঠাগারটি হওয়ায় দারুণ খুশি গ্রামের বয়স্করাও। গ্রামের বাসিন্দা টুটুল মিয়া বলেন, ‘লাইব্রেরিটা দেয়াতে খুবই ভালো হয়েছে। আগে পোলাপান এলোমেলো ঘুরত, মোবাইলে গেমস খেলত। এখন দেখি আবার ওরাই এই লাইব্রেরিতে আসে। বই পড়ে, গল্পগুজব করে। দেখতেই ভালো লাগে।’

ইদ্রিস আলী নামে আরেক মুরব্বি বলেন, ‘যেসব পোলাপান মাদকসেবন কিংবা রাস্তাঘাটে অন্যদের ডিস্টার্ব করে বেড়াত; এখন দেখি কোনো পোলাপানই রাস্তায় নাই। সুযোগ পেলেই সব এই লাইব্রেরিতে এসে বই পড়ে। হরেক রকমের বই আছে এখানে। উঠতি বয়সের পোলাপানই বেশি আশে। এখন অনেক শান্তি হয়েছে গ্রামটিতে।’

জ্ঞানের আলো ছড়ানোর মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কচুয়া গ্রামে এই পাঠাগারটি স্থাপন করা হয় ২০১৫ সালে। তবে প্রতিষ্ঠান ছয় বছর পর ২০২১ সালে নিজস্ব জমিতে টিনের আধাপাকা ঘর পেয়েছে এই জ্ঞানালয়।

সপ্তাহের সাত দিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে পাঠাগারটি। রবীন্দ্র রচনাবলিসহ পাঠাগারে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সাময়িকীসহ দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার বই।

গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে পাঠাগারটিতে খেলাধুলাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে পাঠকের জন্য। দেশ-বিদেশের খবরাখবর, অনুষ্ঠানাদি দেখার জন্য আছে টেলিভিশনও। আর পাশেই রয়েছে একটি কফি হাউস, খোলা প্রান্তর।

সরজমিন দেখা গেছে, সম্পূর্ণ বিনা খরচে পাঠক এখানে বই পড়তে পারেন। এমনকি বাড়িতেও বই নিয়ে যেতে পারেন। তবে নির্দিষ্ট সময় পর এগুলো আবারও ফেরত দিতে হয় পাঠাগারে।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মামুন হায়দার বলেন, ‘সেলিম আল দীন পাঠাগারে সংগৃহীত রয়েছে নানা মত ও পথের বই। বই ছাড়া প্রকৃত মনুষ্যত্ব লাভ করা যায় না। একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার সব ধরনের পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটায়; নৈতিক চরিত্র গঠনে অবদান রাখে। পাঠাগারের মাধ্যমেই একটি উন্নত, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান জাতি গড়ে ওঠে।’

তার মতে, পাঠাগার মানুষের ক্লান্ত, বুভুক্ষু মনকে আনন্দ দেয়। জ্ঞান প্রসারে রুচিবোধ জাগ্রত করে।

তাই সুস্থ সংস্কৃতির বিস্তার ঘটাতে, প্রকৃত জ্ঞানার্জন ও প্রাণশক্তি বৃদ্ধির জন্যই সেলিম আল দীন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক ও কলামিস্ট ড. হারুন রশীদ বলেন, ‘আমরা এখানে একটি কালচারাল ইউনিভার্সিটি গড়ে তুলব। তারই অংশ হিসেবে একটি সাংস্কৃতিক বলয় সৃষ্টির চেষ্টা এই পাঠাগার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং রবীন্দ্রোত্তর কালের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার সেলিম আল দীনের নামে এই পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

ড. হারুন জানান, স্থানীয় মান্দাই নৃগোষ্ঠী নিয়ে ‘বনপাংশুল’ নামে নাটক লিখেছেন সেলিম আল দীন। তাই পাঠাগারের মাধ্যমে তার স্মৃতি ধরে রাখার প্রচেষ্ঠা।

তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে নতুন প্রজন্ম মোবাইল ও ফেসবুকমুখী হচ্ছে। তাদের বইমুখী করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

বর্তমানে এই পাঠাগার থেকে মেধাবৃত্তি, রোদ্দুর নামে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশসহ নানামুখী সৃজনশীল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এর কর্মপরিধি আরও বাড়বে বলে জানান ড. হারুন রশীদ। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর