বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যে গাছ বদলে দিয়েছে রংপুরকে

  •    
  • ২৮ জুন, ২০২২ ০৮:৪১

অর্ধশতাব্দী আগে বাগানের একটি আমগাছ দিয়ে শুরু। সেই আমগাছ গত কয়েক দশকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রংপুর জেলায়। হাঁড়িভাঙ্গা আম এ অঞ্চলের অর্থনীতিকেই বদলে দিতে শুরু করেছে।

রংপুর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ বাজার। বাজারের প্রবেশপথে চোখে পড়বে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ভাস্কর্য। তিনটি আম দিয়ে তৈরি এই ভাস্কর্যের জায়গাটিকে বলা হয় আম চত্বর। যে কেউ এখানে এলেই বুঝতে পারবেন এটি হাঁড়িভাঙ্গা আমের জগৎ।

সম্প্রতি এই চত্বরে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির রহমান মামুনের। বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। বন্ধুর সঙ্গে আম কিনতে এসে তাকে নতুন করে বলতে হয়নি জায়গাটি ‘পদাগঞ্জ’। ভাস্কর্য দেখেই চিনে নিয়েছেন।

পদাগঞ্জ থেকে মিঠাপুকুর বা বদরগঞ্জ উপজেলার যেকোনো পথে এগোলে চোখে পড়বে সারি সারি আমগাছ। গত তিন দশকে সুস্বাদু এই আম অর্থনৈতিকভাবে বদলে দিয়েছে মিঠাপুকুর, এমনকি পুরো রংপুরকে।

রংপুর কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুর জেলায় এখন ১২ হাজার হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান। সব থেকে বেশি আম হয় মিঠাপুকুরের খোঁড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে। এ এলাকাটির মাটি লাল হওয়ায় আমের স্বাদও ভিন্ন। দ্বিতীয় অবস্থানে জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা। আরও বেশ কয়েকটি উপজেলায় এ আমের চাষ হয়।

পদাগঞ্জের সীমানায় পৌঁছলে চোখে পড়বে এক অভাবনীয় দৃশ্য। পথের ধারে, প্রতিটি বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, বাড়ির উঠানে লাগানো আমগাছ। কোথাও কোথাও ধানিজমির আলের চতুর্দিকে সারি সারি করে আমগাছ লাগানো হয়েছে। সব গাছ প্রায় একই আকারের। আর তাতে ঝুলে আছে শত শত আম।

রংপুর কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার আট উপজেলায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে এবার আমের আবাদ হয়েছে, যেখান থেকে ২৯ হাজার ৪৩৬ টন আম উৎপাদন হবে।

আমের নাম হাঁড়িভাঙ্গা যেভাবে

আমের নাম হাঁড়িভাঙ্গা। এলাকার এ জাত এখন সারা দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। কোথা থেকে এলো এই জাত? আর এর নামটাই বা এলো কোথা থেকে?

এলাকায় যে জনশ্রুতি চালু আছে, সেটি এলাকার আম ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন পাইকারের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত।

আমজাদ হোসেন পাইকার নিউজবাংলাকে জানান, তার বাবা নফল উদ্দিন পাইকারও আমের ব্যবসা করতেন। ১৯৭০ সালে শতাধিক বছর বয়সে তিনি মারা যান। তার মুখে এই আমের জন্ম-ইতিহাস শুনেছেন তিনি।

আমজাদ হোসেন পাইকার বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি, রংপুরের মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে জমিদার রাজা তাজ বাহাদুর সিংয়ের বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধি ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল। বাগানটি যমুনেশ্বরী নদীর তীরে। জমিদার বাড়িতে আব্বার আসা-যাওয়া ছিল। জমিদারের বাগানসহ অন্য আমচাষিদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে তিনি পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন। জমিদারের বাগানের বিভিন্ন আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুমিষ্ট, সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় তিনি ওই গাছের একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ বাগানে লাগান।’

তিনি বলেন, ‘গাছটি রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার জন্য একটা হাঁড়ি বসিয়ে তাতে ফিল্টার দিয়ে গাছে পানি দিতেন তিনি। কিছু দিন পরপর কে বা কারা সেই হাঁড়ি ভেঙে দেয়। কিন্তু গাছের নিচে যে আব্বা হাঁড়ি বসিয়েছেন, সেটা সবাই জানত। এরপর গাছে খুব আম ধরে। খেতে সুস্বাদু। এলাকার লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করেন, “নওফেল এটা কোন গাছের আম?” তখন আব্বা তাদের বলেন, “এটা হাঁড়ি দিয়ে যে গাছে পানি দেয়া হয়েছে, সেই গাছের আম।” তখন থেকে এই আমের নাম হয় “হাঁড়িভাঙ্গা”।’

আমজাদ হোসেন পাইকারের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে সেই মাতৃগাছটি মিঠাপুকুরের তেকানি মসজিদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

হাঁড়িভাঙ্গা আমের এই জন্মকথার সত্যতা যাচাই করার উপায় নেই। তবে এলাকার বয়স্করা অনেকে এটি সমর্থন করেন।

কীভাবে এলো এই আম

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুড়িরহাট, রংপুর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশিষ কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গার অরিজিন এখানেই (রংপুরের পদাগঞ্জ)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী বা ভারতের মালদহ জেলা একসময় তো একই ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের যত আমের ভ্যারিয়েন্ট আছে, সব মালদহ ডিস্ট্রিকের। কিন্তু এখানে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বহু ভ্যারিয়েন্ট আছে। সুতরাং অনুমান করা যায়, হাঁড়িভাঙ্গার অরিজিন এখানেই।’

তিনি বলেন, ‘কথিত আছে বা প্রচার করা হয় হাঁড়িভাঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তসংলগ্ন এলাকার মালদিয়া বা মালদই আম থেকে এসেছে। আসলে এটা সত্যি নয়। মালদিয়া আমের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই হাঁড়িভাঙ্গা আমের।’

যেভাবে সম্প্রসারণ

হাঁড়িভাঙ্গা আম এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন যে লোকটি, তিনি আবদুস সালাম সরকার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘’আমি সমবায় অফিসার ছিলাম। চাকরির মেয়াদের ১০ বছর আগে স্বেচ্ছায় অবসর নিই। ১৯৯২ সালে একদিন বিকেলে আমার এক নাতি এসে বলে, “দাদু আমটা খেয়ে দেখো, অনেক সুস্বাদু।” আম খেয়ে অনুসন্ধান করি গাছের। পরে নওফেল উদ্দিন পাইকারের সেই গাছ থেকে অনেক কলম এনে আমার ১০ একর জমিতে রোপণ করি।’

তিনি বলেন, ‘এই আম সম্প্রসারণ করতে এমন কোনো কাজ নেই করিনি। গ্রামের মানুষের কাছে গেছি, ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গেছি। ঢাকায় দুটি বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মিডিয়াকে ডেকে ডেকে নিউজ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাকে ডেকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। সরকারের কৃষিমন্ত্রীকে এনে আমের মেলা করেছি। পোস্টার করে পুরো জেলায় ছাপিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনো সেনানিবাস নেই যেখানে এই আমের চারা দেয়া হয়নি। সরকারের বড় কর্মকর্তাদের এই গাছের চারা উপহার দিয়েছি। এখন পুরো বাংলাদেশ, এমনকি বিশ্বের বহু দেশে যাচ্ছে এই আম।’

আব্দুস সালাম সরকার প্রায় ৩০ বছর ধরে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ করছেন। এখন রংপুরে কয়েক লাখ হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ রোপণ করেছেন আমচাষিরা। আব্দুস সালামের নিজেরই ২৫টির বেশি বাগান রয়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হয় বলে লোকে এখন জেলার উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

মৌসুমি ব্যবসায়ী

একসময় রংপুর অঞ্চলের মানুষ ধানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রতি মৌসুমে পাঁচ-দশ বিঘা জমি চাষাবাদ করে কোনো রকমে চলত। এখন সেই জমিতে আম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকরা। রংপুরের এই ‘আম অর্থনীতি’ মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে।

বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে রংপুরের নতুন অর্থকরী ফসল ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম’। মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জের বিস্তৃত এলাকার হাজার হাজার কৃষক এই আম চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। কৃষক, দিনমজুর থেকে অনেকেই হয়েছেন আমচাষি। বছর বছর এটি চাষের পরিধি বাড়ছে।

রংপুরের মিঠাপুকুর সদরের গোলাম মোস্তফা জানান, ‘খোড়াগাছ এলাকায় মাত্র ৬০ হাজার টাকায় আমি একটি বাগান কিনি। এবার সেই বাগানের আম আমি ২ লাখ বিক্রি করেছি। আরও ১ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারব। যে খরচ হয়েছে, তাতে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় হবে।’

তিনি বলেন, ‘আগে একটু অভাব-অনটন ছিল। এখন ভালো আছি। সাত বছর থেকে আমি এই আমের ব্যবসা করতেছি।’

ছবিউল ইসলাম নামে এক আম বিক্রেতা বলেন, ‘আগে তো মানুষের বাড়িতে মজুর করছি, গাড়ি চালাইছি। এখন আমার দুইটা বাগান আছে। বছর চারেক থেকে আমের বাগান কিনে আম বিক্রি করি। সেজনে সেজনে (বছরে বছরে) যে টাকা লাভ হয়, তা দিয়ে পুরো বছর চলে সংসার চলে। ছৈলদের পড়ালেখা চলে। যে টাকা বাঁচে, সেটা দিয়ে পরের বছর বাগান কিনি।’

মতিয়ার রহমান নামে এক আম বিক্রেতা বলেন, ‘আমি বাগান কিনি না। বাজার থেকে আম কিনে ব্যবসা করি। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে বাড়ির আম প্রতিদিন দুই ভ্যান, তিন ভ্যান, চার ভ্যান, পাঁচ ভ্যান বিক্রি করি। আম বেচে জমিজমা টুকিটাকি করছি।’

আমের ঝুড়ি বা ক্রেট বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমি ঢাকায় চাকরি করতাম। এখন গ্রামে আসছি ব্যাবসা করার জন্যে। প্রতি সিজনের ক্রেট ব্যবসা করে ভালোই চলে। প্রতি ক্রেটে ১০-১৫ টাকা লাভ করি।’

হাঁড়িভাঙ্গা আম ঘিরে রংপুরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মিঠাপুকুর উপজেলার লালপুর, পদাগঞ্জ, তেয়ানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

কয়েক বছর ধরে এ আমের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমন দামও পাচ্ছেন চাষিরা। শুরুতে বাগানে ১ হাজার ২০০ থেকে ১৬ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি হলেও শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মণ।

সুমন মিয়া নামে এক শিক্ষাথী বলেন, ‘আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমার বাবা মারা গেছেন ১০ বছর আগে। চার বছর ধরে প্রতি সিজনে আমের কাজ করে সংসার চালাই। সঙ্গে লেখাপড়া করি। প্রতিদিনে কখনও ৫০০, এক হাজার, আবার কোনো কোনো দিন বারো শ’ টাকা ইনকাম হয়।’

আশাদুর জামান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বাসায় থাকি, বাসায় থেকে পড়া লেখা করি। আমের সিজেন এলে আমের গোডাউনে কাজ করি। ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমের ব্যবসায়ীরা আসেন আম কিনতে। আমরা সেই আম প্যাকেট করে গাড়ি লোড দিয়ে দিই। এইখানে আমরা কাজ করলে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাই।’

আজহারুল ইসলাম নামে এক আমচাষি কৃষি শ্রমিকের কাজ ছেড়ে এখন হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যবসা করছেন। গত বছর পাঁচ একর জমির আম আগাম কিনে তা ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করেন তিনি। এবার ১০ একর জমির আম কেনা হয়েছে। এবারও ভালো লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।

তৈরি হয়েছে তরুণ উদ্যোক্তা

জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প সমিতির রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি মো. রাকিবুল হাসান রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার জানাশোনার মধ্যে রংপুরের দুই শতাধিক তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা এই আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনলাইনে অফলাইনে বিক্রি বিক্রি করেন। এরা মৌসুমি ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে কেউ শিক্ষার্থী, কেউ অন্য ব্যবসা করেন। এ বছর আমরা কমপক্ষে ১০০ মণ আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাব।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর নতুন নতুন উদ্যাক্তা তৈরি হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর বা আশার দিক।’

রংপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গার কারণে যে উদ্যাক্তা তৈরি হচ্ছে, তা আশাব্যঞ্জক। আমি শুনতেছি অনেকে এই ব্যবসা করেন।’

বিশ্বদুয়ারে হাঁড়িভাঙ্গা

রংপুরের বিখ্যাত এই আম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৪ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য উপহার হিসেবে পাঠান।

এই আম খেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রশংসা করেছিলেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছিল।

এ ছাড়া প্রতি বছর মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় এই আম।

রপ্তানির টার্গেট

রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, গত বছর ৫০০ টন হাঁড়িভাঙ্গা আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর ৭০০ টন বা তার বেশি রপ্তানির টার্গেট আছে। ইতোমধ্যে গত ১৭ জুন ভারতে ২০ টন হাঁড়িভাঙ্গা আম রপ্তানি করা হয়েছে। ধীরে ধীরে তা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অনেকে বেসরকারিভাবে আম বিদেশে রপ্তানি করে থাকেন। তাদেরও সহযোগিতা করি আমরা। সরকারিভাবেও রপ্তানি করা হবে।’

অর্থনীতিতে অবদান

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুরের অর্থনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। অনেক বছর ধরে শত শত কোটি টাকার আম বিক্রি করছেন চাষিরা। এই টাকা রংপুরের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দর রয়েছে, চিলমারী নৌবন্দর রয়েছে। আমরা যদি সেভেন সিস্টার বলে ভারতের যে রাজ্যগুলো আছে, সেগুলোতেও রপ্তানি করতে পারি, তাহলে অনেক আয় অর্জন সম্ভব। এই আম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে সচ্ছল বানিয়েছে। রংপুর অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নে এই আম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

সম্প্রসারণে কী করা উচিত

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই আম এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। স্বাদ, গুণাগুণ, মিষ্টতা সব মিলিয়ে এটি অনন্য। এই আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, আরও বৃহৎ আকারে পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এই আম কীভাবে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়ে গবেষণা করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘এই আমকে ঘিরে ফুড প্রসেসিং জোন প্রতিষ্ঠা করা হলে আম দিয়ে যে বিভিন্ন প্রডাক্ট তৈরি হয়, সেটা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ‘শুধু রংপুর অঞ্চল নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে যদি এই আম সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি উপায়।’

এ বিভাগের আরো খবর